অপহৃত নাইজেরিয়ান ছাত্রীদের মুক্তি: মুসলমান হতে না চাওয়ায় এখনও একজন বন্দী

নাইজেরিয়ার ইয়োব প্রদেশের দাপচি শহরে গত ফেব্রুয়ারিতে হামলা চালানো ইসলামি জঙ্গিদের দ্বারা অপহৃত ছাত্রীরা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু মুক্তি পাওয়া ছাত্রীরা জানিয়েছে, জঙ্গিদের হাতে আটক থাকা অবস্থায় তাদের পাঁচজন সহপাঠী মৃত্যুবরণ করেছে। তাছাড়া একজন ছাত্রী শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণে রাজি না হওয়ায় এখনও জঙ্গিদের হাতে আটক আছে। ফিরে আসা ছাত্রীদের বেশির ভাগকেই সরকার সঙ্গে সঙ্গে হাসপতালে নিয়ে গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, নাইজেরিয়া ‘সংঘাতের’ বদলে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ অপহৃত ছাত্রীদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানোর দাবি করেছে।

সর্বশেষ উদ্ধার পাওয়া নাইজেরিয়ান ছাত্রীদের একাংশ

একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের সদস্যরা বুধবার সকালে কয়েটি ট্রাকে করে অপহৃত ছাত্রীদের ফিরিয়ে দিয়ে যায়। ছাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আবার তারা কোনও বাধা ছাড়াই ফিরে যায় তারা। ফিরতে পারা অপহৃত ছাত্রীদের একজন খাদিজা গ্রেমা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে ধরে নিয়ে যাওয়া ছাত্রীদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছে। আর একজন ছাত্রী খ্রিস্টান হওয়ায় তাকে এখনও আটকে রাখা হয়েছে।’ দাপচির বাসিন্দা মুহাম্মাদ বুরসারি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অপহৃত হওয়া তার এক নিকটাত্মীয়া ফিরে এসে জানিয়েছে, যে মেয়েটিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি সে খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে সে রাজি হয়নি। তাই তাকে ছাড়েনি ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম। এক অপহৃত ছাত্রীর বাবা মোহাম্মেদ দালা তার ১২ বছর বয়সী মেয়েকে ফিরে পাওয়ার কথা জানিয়ে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর গাড়ির মতো রং করা কিছু ট্রাকে করে এসে আলির চায়ের দোকানের সামনে বোকো হারেমের জঙ্গিরা অপহৃত ছাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়েকে খুঁজে পেয়ে, তাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছি। তবে ফিরে আসা বেশিরভাগ মেয়েদেরই নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অপহরণ করা ১১০ জন ছাত্রীর মধ্যে শতাধিক ছাত্রী এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে। যদিও নাইজেরিয়ার সরকার তাদের এক বিবৃতিতে ‘চলামান প্রচেষ্টার দরুন’ ৭৬ জনের মুক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী লাই মোহাম্মেদ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অনানুষ্ঠানিক প্রচেষ্টা এবং নাইজেরিয়ার কিছু বন্ধুর সহযোগিতায় ছাত্রীদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সরকার এটা বোঝে যে সহিংসতা এবং সংঘর্ষের মাধ্যমে অপহৃতদের মুক্ত করা যাবে না। বরং তাতে ছাত্রীদের প্রাণনাশের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সংকট নিরসনে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেওয়া হয়েছে।’ তবে কারা সেই বন্ধু এবং অনানুষ্ঠানিক প্রচেষ্টা বলতে ঠিক কি বোঝানো হয়েছে সে বিষয়ে কোনও ব্যখ্যা দেননি তিনি।

বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দেওয়া ২০১৪ সালের চিবুক অপহরণের পর দাপচির অপহরণই বোকো হারাম ও নাইজেরিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা। অপহৃতদের বয়স ছিল ১১ থেকে১৯ বছর। পর্যবেক্ষকদের মতে মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃতদের মুক্তি দিচ্ছে বোকো হারাম। কারণ চিবুকের ঘটনাতেও তারা লাখ লাখ ডলার নিয়েছিল অপহৃতদের কয়েকজনকে মুক্তি দিতে।