বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তিউনিসিয়ায় সাড়ে ছয় লাখ চাকরিজীবীর ধর্মঘট

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) থেকে তিউনিসিয়ার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে। সরকার তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না দেওয়ায় বাড়ছে ক্ষোভ। অন্যদিকে সহায়তা করে চলা আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে শর্ত অমান্য করলে ঋণ বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে দেশটিকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বেতন বৃদ্ধির জোরালো দাবি উঠলেও তিউনিসিয়াকে বরং সামনের বছরগুলোতে বাজেট ঘাটতি হ্রাস ও সরকারি খাত ছোট করে আনার শর্ত পালন করে যেতে হবে।2018-11-22T122334Z_1446671406_RC14B1998600_RTRMADP_3_TUNISIA-PROTESTS-STRIKE

ধর্মঘট ঘোষণার কারণে তিউনিসিয়ায় বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, পৌরসভা থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালেও শুধুমাত্র জরুরি সেবা চালু রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ইউজিটিটির আয়োজনে ডাকা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত পাঁচ বছরে এটাই তিউনিসিয়ার সবচেয়ে বড় ধর্মঘট। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ চাহেদ এ বছর বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৪.৯ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বছর ঘাটতি হ্রাসের পরিমাণ ছিল ৬.২ শতাংশ।

সরকারি ব্যয় কমানো, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কৃচ্ছ্বতা সাধন ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানোর মতো যে সিদ্ধান্ত তিনিসিয়াকে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে তা দেশটির নাগরিকদের কাছে অজনপ্রিয়। ২০১১ সালে বেকারত্ব ও দারিদ্রের কারণে ঘটা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক জাইন আল আবিদিন বেন আলি। দেশটির অর্থনীতির অবস্থা এখনও টালমাটাল। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশটির সংসদের সামনে সমাবেত হতে দেখা গেছে। সেখানে তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে স্লোগান দিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত হওয়া একজন নাফিসা (৫০)। তিনি বলেছেন, ‘৩০৯ ডলার বেতন দিয়ে আমি আমার ছেলের খাবার কেনা ও পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। আমি ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করতে পারছি না।’

ইউজিটিটির প্রধান নৌরেদিন তাবৌবি বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে গেছে। কারণ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। তা রয়েছে আইএমএফের হাতে।’ সরকারের ভাষ্য, ধর্মঘটীদের দাবি মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ তার জন্য অতিরিক্ত ৬৯ কোটি ডলার লাগবে। সরকারের পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব নয়।

সরকারের একজন মুখপাত্র আইয়াদ দাহমানি মন্তব্য করেছেন, ‘শাহেদের যদি জনপ্রিয়তা পাওয়া বা ভোটের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে কাজ করার ইচ্ছে থাকত তাহলে তিনি বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলতেন। কিন্তু আমরা জানাতে চাই, স্বাক্ষর করে ফেলার পর ওই পরিমাণ অর্থের যোগানদাতা কে হবে তা আমরা জানতে চাই।’ আইএমএফে মতো আন্তর্জাতিক ঋণ সহায়তা দেওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সংস্কার না করলে তারা আর অর্থ দেবে না।

২০১০ সালে তিউনিসিয়ায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাবদ যা খরচ হতো ২০১৮ সালে এসে তা দ্বিগুণ করা হয় (৫৫০ কোটি ডলার)। কিন্তু দেশটির ‘ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ বলেছে, প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তিউনিসিয়ার সরকার ২০২০ সালের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ জিডিপির ১২.৫ শতাংশ পরিমাণ হ্রাস করতে চায়। বর্তমানে এটি জিডিপির ১৫.৫ শতাংশ।

তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে দেশটি আইএমএফের সঙ্গে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি করতে বাধ্য হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী সংস্থাটি তিউনিসিয়াকে ২৮০ কোটি ডলার দেবে অর্থনীতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কিন্তু সরকারকেও সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয় হ্রাস।2018-11-22T110345Z_1807716161_RC1F78D5F400_RTRMADP_3_TUNISIA-PROTESTS-STRIKE