আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে হত্যার শিকার খ্রিস্টান যাজকদের ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। কোনও মুসলমান অধ্যুষিত দেশে এটাই খ্রিস্টানদের এমন প্রথম আয়োজন। রোমান ক্যাথলিক চার্চ যে প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাউকে সেইন্ট ঘোষণা করে, তারই একটি ধাপ কাউকে ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’ ঘোষণা করা। খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠানের পর নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সমাবেত হন স্থানীয় একটি মসজিদে। সেখানকার ইমাম তাদেরকে সমবেদনা জানান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিহত যাজকদের ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন. মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আলজেরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া গোষ্ঠীগুলোর একটি ‘আর্মড ইসলামিক গ্রুপ অব আলজেরিয়া’ যাজকদের হত্যার দায় শিকার করেছিল।
আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে নিহত ১৯ জন ধর্ম যাজককে ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। এদের মধ্যে সাত জনই ফরাসি। তারা ট্রাপিস্ট মঙ্ক। ‘নটরডেম ডেম ডি অ্যাটলাস’ মোনাস্ট্রি থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল। তারা ছাড়াও হত্যার শিকার হয়েছিলেন স্পেন, বেলজিয়াম, এবং মাল্টার নাগরিকরা। শুধু ৪৫ থেকে ৮২ বছর বয়সী পুরুষদের ধড় পাওয়া গিয়েছিল। ‘আশীর্বাদপ্রাপ্তদের’ মধ্যে আছেন একজন নারীও। আশীর্বাদপ্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিশপ ওরান পিয়েরে ক্লাভেরির নাম। ১৯৯৬ সালে বোমা বিস্ফোরণের তার বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি ও তার গাড়ির চালক প্রাণ হারান ওই হামলার ঘটনায়।
পোপের প্রতিনিধি কার্ডিনাল অ্যাঞ্জেলো বেসিউ শনিবার এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করেন আলজেরিয়ার ওরান শহরে। ‘আওয়ার লেডি অব সান্তা ক্রুজ’ নামক গির্জায় ছিল সংশ্লিষ্টদের উপচে পড়া ভিড়। প্রায় ১২০০ মানুষের ব্যবস্থাপনার জন্য বসানো হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানের শুরুতে আলজেরিয়ার আর্চবিশপ পল দেসফারজেস গৃহযুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাদেরকে ‘নাম না জানা নায়ক’ আখ্যা দেন। অনুষ্ঠানে ফাদার থিয়েরি বেকার আরবিতে প্রার্থনা পাঠ করেন।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলেছে আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ। সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলা যুদ্ধে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় দুই লাখ মানুষ।