দক্ষিণ আফ্রিকায় লুটপাটে অংশ নিচ্ছে পুলিশ সদস্যরাও

সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ আফ্রিকা। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও রাজধানী জোহানেসবার্গসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী গোষ্ঠীগুলো। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের পাশাপাশি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছ লুটপাট। এমনকি রীতিমতো ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যকেও দেখা যাচ্ছে লুটতরাজে অংশ নিতে।

বিদ্যমান দাঙ্গা পরিস্থিতির ফলে এমনিতেই দেশটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও কোভিড ওষুধের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই খোদ পুলিশকে দেখা গেছে লুটেরার ভূমিকায়।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত এক ব্যক্তি দোকান থেকে ব্রেড, দুধ ও রান্নার তেলসহ গৃহস্থালী সামগ্রী সরানোর সময় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনার ভিডিও ধারণকারী নারী বলছিলেন, এই লোক একজন পুলিশ অফিসার। ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তিনি লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। এটাই আমাদের এসএপিএস (দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশ সার্ভিস)।

একই নারীর আরেক ভিডিওতে, সাদা পোশাকের একজন কর্মকর্তাকে ক্যামেরা থেকে মুখ লুকানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। তার গাড়ি ফ্ল্যাট স্ক্রিন টেলিভিশনসহ লুট করা সামগ্রীতে ভরা ছিল।

জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় এরইমধ্যে অন্তত ৭২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন পদদলিত হয়ে মারা যায়। সোমবার রাতে সোয়েতোর একটি শপিং সেন্টারে লুটপাটের সময় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

বিবিসির ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ডারবানে একটি ভবনের নিচতলার দোকানে লুটপাটের পর তাতে আগুন লেগে গেলে এক নারী নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তাকে নিচে ছুঁড়ে দেন। গত সপ্তাহে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পুলিশকে সহায়তা করতে বর্তমানে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, তারা ১২ সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে যারা দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছে। এছাড়া সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ শেষ হওয়ার আগে ১৯৯০-এর দশকের পর তিনি এ ধরনের জঘন্য সহিংসতা আর দেখেননি।

মন্ত্রীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে ওইসব এলাকায় শিগগিরই প্রধান খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিবে। কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে অসম্মতি জানিয়েছেন।

ক্ষয়ক্ষতি কতটা ব্যাপক?

সোমবার বিকেল পর্যন্ত দুই শতাধিক শপিং মলে লুটপাট চালানো হয়েছে। দেশটির ব্যবসায়ী নেতা বুসিসিয়ে মাভুসোর বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ।

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শহরাঞ্চল সোয়েতোতে বেশ কিছু শপিং সেন্টার পুরোপুরি লুটে নেওয়া হয়েছে। এই শহরটিতেই নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি ছিল। শহরটির এটিএমগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহল ও কাপড়ের দোকান সবকিছু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার টাইমসলাইভ নিউজ সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্বয়াজুলু-নাটাল শহরে গবাদিপশুও চুরি করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ওপরও হামলা চালিয়েছে দাঙ্গাবাজরা।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় ডারবানের একটি ব্লাড ব্যাংকেও লুটপাট চালানো হয়। সূত্র: ডেইলি মেইল, বিবিসি।