জনগণের ভোট ছাড়াই যে দেশে নির্বাচন হলো

সোমালিয়ার পার্লামেন্টের জন্য বেশিরভাগ এমপি অনন্য নির্বাচনের পর শপথ নিয়েছেন। দেশটির পার্লামেন্টের নাম হাউজ অব দ্য পিপল (জনগণের ঘর)। কিন্তু এই নির্বাচনে ভোট দেননি দেশটির জনগণ। চার মাস দীর্ঘ ছিল এই নির্বাচন প্রক্রিয়া।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, ১ কোটি ৬৩ লাখ জনসংখ্যার দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র হাজার খানেক মনোনীত ব্যক্তি। 

এর কারণ হলো সোমালিয়াতে একটি জটিল ও পরোক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয় না। নেই ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ নির্বাচনি ব্যবস্থাও।

এর বদলে পার্লামেন্টের ২৭৫ জন এমপি নির্বাচিত হন বিভিন্ন গোত্র প্রধান দ্বারা মনোনীত প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্বাচিত সুশীল সমাজের সদস্যদের দ্বারা। এরপর এমপিরা ভোট দিয়ে নির্বাচন করেন প্রেসিডেন্ট, যিনি দেশ পরিচালনা করেন।

৫৪ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সিনেট, সোমালিয়ার পাঁচটি আঞ্চলিক রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারীরাও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

কেন এভাবে এমপিরা নির্বাচিত হন?

এই ব্যবস্থাটি সোমালিয়ায় গোত্রগুলোর ক্ষমতার প্রকাশ করে। পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র না থাকা দেশটির মেরুদণ্ড এই গোত্রগুলোই। কার্যকর রাষ্ট্রের শূন্যতাও পূরণ করে তারা। ১৯৯১ সালে সিয়াদ বারের নেতৃত্বাধীন সমাজতন্ত্রী শাসনের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেশটিতে ছিল না।

সোমালিয়ার বিভিন্ন গোত্রগুলোর মধ্যে চরম বিরোধের কারণে এই ব্যবস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে ক্ষমতার বণ্টন নীতির আলোকে। যেখানে চারটি প্রধান গোত্রে পার্লামেন্টারি আসনের সংখ্যা সমান, অবশিষ্ট গোত্রগুলো সম্মিলিতভাবে অর্ধেক আসন পেয়েছে। এর ফলে গোত্রের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক কিংমেকারে পরিণত হয়েছেন।

পার্লামেন্টের দুই কক্ষের নির্বাচনের পর প্রায় ৩০০ এমপি শপথ নিয়েছেন। কিন্তু এখনও ৩০ জন এমপির নির্বাচন চূড়ান্ত হয়নি বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধের কারণে। এর মধ্যে রয়েছে প্রার্থীর যোগ্যতার বিষয়ও।

নির্বাচনে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের কিনে নিতে লাখো ডলার ব্যয় করা হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কোনও প্রতিষ্ঠান দেশটিতে নেই।

সোমালিয়ার রাজনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৭ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি ফারমাজোর প্রচারণার তহবিল একাই সরবরাহ করেছে দোহা এবং প্রশাসনে তাদের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।

সোমালিয়া কী গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারবে?

দীর্ঘদিন আগে সোমালিয়ার ক্ষমতার মধ্যস্থতাকারীরা এই বছর ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।

এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। কারণ এমন নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই সম্পন্ন করা হয়নি। যেমন- রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের অনুস্বাক্ষর।

আগামী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় এমন নির্বাচন থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। নতুন সরকার সরকারকে বড় ধরনের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

সূত্র: বিবিসি