নির্বাচনি বিতর্কে ভেনেজুয়েলায় পদযাত্রা

নির্বাচনি বিতর্কের জেরে ভেনেজুয়েলায় পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছে হাজারও মানুষ। চলমান এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২ হাজার মানুষকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (৩ আগস্ট) দেশজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, মাদুরো ৫১ শতাংশ ও তার প্রতিদ্বন্দী এডমুন্ডো গঞ্জালেস ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের এই ফলাফল নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে সমালোচকদের তোপের মুখেও নিজেদের বিবৃতিতে অটল থাকে কর্তৃপক্ষ।

সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট তীব্র জনরোষ দেশব্যাপী বিদ্রোহে রূপ নেয়। পুরো বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন মাদুরো। বিরোধীদের শক্ত হাতে দমন করতে রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

কারাকাসে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মাদুরো বলেন, ‘এবার কোন ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে না।’ অপরাধীদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’র আওতায় আনার অঙ্গীকার করেন তিনি।

মাদুরোর সমর্থকরা বলছেন, তারা গণতন্ত্র রক্ষা করতে এসেছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভেনেজুয়েলার ফনতুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট আলফ্রেডো ভেরালা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের আহ্বানে আমরা সমবেত হয়েছি।’

এদিকে, আরেক নেতা মারিয়া কোরিনা মাকাদোর নেতৃত্বে কারাকাসে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন সাধারণ জনতা। আত্মগোপনে থাকা মাকাদো দেশবাসীর সঙ্গে সংহতি জানাতে জনসম্মুখে আসেন।

এসময় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মাকাদো বলেন, ‘দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর নির্বাচনে আমরা জয় পেয়েছি। আমরা এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি। তবে আজ আমরা যতটা শক্তিশালী, তা আমরা কোনদিনই ছিলাম না।’

মাকাদোকে সঙ্গে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিজের জীবন ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি। একই লেখায় আত্মগোপনে থাকার কথাও উল্লেখ করেন।

কারাকাসের পাশাপাশি ভ্যালেন্সিয়া, মারাকাইবো ও স্যান ক্রিস্টোবাল শহরেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

স্যান ক্রিস্টোবালের বাসিন্দা ৪৬ বছর বয়সী মারিয়া লুজারদো সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখে ভয় পাচ্ছি ঠিকই। তবে এত হুমকির পরও মাকাদো পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। তাই আমাদেরও ভয় পেলে চলবে না। দেশ আমাদেরকে ডাকছে।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিউমান রাইটস ওয়াচের ভাষ্যমতে, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে, ইতোমধ্যেই মাদুরোর প্রতিদ্বন্দী গঞ্জালেসকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার দেওয়া একটি বিবৃতিতে ‘বিপুল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে’ গঞ্জালেসকে বিজয়ী ঘোষণা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এছাড়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পানামা, ও উরুগুয়ে শুক্রবার গঞ্জালেসকে হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

অন্যদিকে, রাশিয়া, চীন ও কিউবাসহ কতিপয় মিত্র রাষ্ট্রগুলো মাদুরোকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে।