চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনে কোয়াড বৈঠক, প্রশ্নের মুখে ঐক্য

চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে গঠিত কোয়াড জোটের বৈঠক বসছে মঙ্গলবার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ বৈঠকে স্বাগতিক হিসেবে উপস্থিত থাকলেও দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েনে জোটের ঐক্য কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

জাপান বৈঠকের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বার্ষিক প্রতিরক্ষা বৈঠক স্থগিত করেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও।

অন্যদিকে ভারত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ রুখতে ‘ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করেছেন’ এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে নয়াদিল্লি।

কোয়াডের চার দেশ চীনের আধিপত্য ঠেকাতে একমত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ নীতিতে মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যয়, এমনকি পারস্পরিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে কোয়াডের সম্মিলিত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

অস্ট্রেলিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আচরণে উদ্বিগ্ন। দেশটিকে পারমাণবিক সাবমেরিন দিতে গঠিত আকুস প্রকল্প নিয়ে পেন্টাগনের তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এলব্রিজ কোলবি পুনর্বিবেচনা শুরু করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ক্যানবেরায়।

মঙ্গলবারের বৈঠকে কোয়াড সদস্যরা একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এই বৈঠক সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার এবং শক্তিশালী সরবরাহ চেইন গঠনে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যে অঙ্গীকারের প্রকাশ।

বৈঠকের পর রুবিও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, জাপানের তাকেশি ইওয়াইয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওয়াংয়ের সঙ্গে।

সোমবার নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, কোনও সম্পর্কই সমস্যামুক্ত হয় না। কিন্তু মূল বিষয় হলো সমস্যাগুলো কীভাবে সামাল দেওয়া যায় এবং সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, মহামারি প্রস্তুতি ও শিক্ষার মতো অনেক ইস্যু রয়েছে যা আলোচনার দাবি রাখে।

এ বছরের শুরুর দিকে কোয়াড ঘোষণায় জানানো হয়েছিল, ভারতের আসন্ন কোয়াড সম্মেলনের আগে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রকট হয়ে উঠছে।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূত আর্থার সিনোদিনোস বলেন, ওয়াশিংটন এই বৈঠককে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বার্তা দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বাণিজ্য এবং আকুস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ এই বার্তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।

জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারির শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে গতি কমেছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর ভারতবিষয়ক গবেষক রিচার্ড রসো বলেন, ট্রাম্পের ভারত সম্পর্কিত কৌশল কিছুটা অগোছালো হলেও দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত স্বার্থ অপরিবর্তিত রয়েছে।