গাজায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে নেপথ্য সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে মরক্কোর বিরুদ্ধে। জনমতের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও দেশটির বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ইসরায়েলে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন অব্যাহত রয়েছে। ডেনমার্কভিত্তিক শিপিং জায়ান্ট মায়ের্স্ক এসব অস্ত্র পরিবহনে প্রধান ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এই পরিবহনের মূল কেন্দ্রে রয়েছে মরক্কোর তাঞ্জিয়ার মেড ও কাসাব্লাঙ্কা বন্দর। সেখান থেকে অস্ত্র, বিশেষ করে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ, মায়ের্স্কের জাহাজে করে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে পৌঁছায়। তারপর এসব সামরিক মালামাল নেওয়া হয় নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে, যেখান থেকে গাজায় বিমান হামলা চালানো হয়।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বন্দর থেকে শুরু হওয়া একটি অস্ত্রবাহী চালান তাঞ্জিয়ারে এসে নেক্সো মায়ের্স্ক নামক আরেকটি জাহাজে স্থানান্তরিত হয়। এরপর তা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায় ইসরায়েলে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মরক্কোর বিভিন্ন বন্দরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনায় অন্তত আটজন ডক শ্রমিক পদত্যাগ করেন।
নভেম্বরে স্পেনে মায়ের্স্কের দুটি কার্গো জাহাজকে ইসরায়েলে অস্ত্র বহনের অভিযোগে নোঙর করতে দেওয়া হয়নি। এরপর থেকেই মরক্কো হয়ে এই ট্রানজিট বেড়ে যায়। ডেনমার্কভিত্তিক সেন্টার ডেলাসের গবেষক আলেজান্দ্রো পোজো বলেন, “মরক্কো-স্পেন রুট এখন নিয়মিত অস্ত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
মায়ের্স্ক দাবি করেছে, তারা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র পরিবহন করে না। তবে কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শাখা মায়ের্স্ক লাইন লিমিটেড মার্কিন সরকারের সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী, যা কোম্পানিটিকে যুদ্ধ-সংক্রান্ত পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়।
মায়ের্স্ক জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা কর্মসূচির অধীনে তারা ১৮০টিরও বেশি দেশে কার্গো পাঠায়, যার মধ্যে ইসরায়েলও রয়েছে।
মরক্কো সরকার এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পোজো বলেন, “একটি সরকার চাইলে সহজেই জানতে পারে একটি চালানের ভেতরে কী আছে।”
মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, মরক্কো পোর্ট অথরিটি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অস্ত্র পরিবহন বিষয়ে প্রশ্ন পাঠানো হলেও এখনো কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) গবেষক জেইন হুসেইনের মতে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করে এবং এর পরিবহনে নির্ভরযোগ্য রুট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মরক্কোর ভৌগোলিক সুবিধা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা এটিকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী করে তুলেছে।
২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে মরক্কো। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র মরক্কোর পশ্চিম সাহারা দাবি স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক গভীর হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মরক্কোভিত্তিক এক সদস্য বলেন, প্রতিটি বোমা, প্রতিটি শিশুর মৃত্যু আমাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নীরবতা এখন আর নিরপেক্ষতা নয়, বরং বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মরক্কোয় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় অন্তত ২০ জন অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কার্নেগি সেন্টারের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা থাকা সত্ত্বেও এখনও মরক্কোর নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। তবে বিরোধী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সমালোচনা করেছে।