রাখাইনে ‘যুদ্ধাপরাধের’ বিচার করতে সময় প্রয়োজন: সু চি

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, সংঘাত কবলিত রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় ন্যায় নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারের আরও সময় প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে এই দাবি করেছেন তিনি। ওই দিনেই (২৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

dassk-housing-for-teachers-education-staff-ygn


সু চি লিখেছেন, মিয়ানমারের বিচার ব্যবস্থাকে নিজস্ব গতিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিলেই কেবল রাখাইনের অপরাধের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তিনি মিয়ানমারের বিচার ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানে সরকারি সেনাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার মিয়ানমারের সামরিক বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হবে।
তবে শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি স্বীকার করেছেন, বিশ্বের যে কোনও সেনাবাহিনীর মতো মিয়ানমার সেনাবাহিনীও ‘নিজেদের সেনা সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করায় তাদের আগ্রহ’ পাওয়া কঠিন।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অভিযোগ বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বলে অভিযোগ করেন সু চি। যা সরকারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মতে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
সোমবার এই কমিশন তাদের প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাখাইনে ২০১৭ সালের সেনা অভিযানে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে গণহত্যার উদ্দেশ্যের কোনও আলামত নেই।
প্রতিবেদনে তিনটি বড় ধরনের নিধনযজ্ঞের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি ঘটনা হলো মংডুর মিন গুই গ্রামে। যেখানে আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির সঙ্গে সরকারি সেনাদের যুদ্ধে ৬০০ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
অপর দুটি নিধনযজ্ঞের একটি রাথেডাউং শহরের চুট পাইন গ্রামে। যেখানে সন্দেহভাজন আরসা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সেনা হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হন। এছাড়া বুথিডাউংয়ের মাউং নু গ্রামে প্রায় ২০০ মানুষকে ইচ্ছে করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সু চি আহ্বান জানিয়েছেন অপ্রমাণিত বক্তব্যে আস্থা স্থাপন না করার জন্য। তিনি বলেন, নিপীড়িতদের কথা অবশ্যই শুনতে হবে এবং যেনও সব সময় আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। কিন্তু একই সঙ্গে সত্যের অনুসন্ধানে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডারদের সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক আইসিজে তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গারা গণহত্যার হুমকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে সম্ভাব্য গণহত্যার যে আলামত পেয়েছে, তা পর্যালোচনা করে আইসিজে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী আদেশে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের সুরক্ষা নিশ্চিতে কোনও প্রস্তাব দেয়নি মিয়ানমার। তাদের অবশ্যই জেনোসাইড কনভেনশন মেনে চলতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ড যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।