উমর খালিদের পাশে চমস্কি, অরুন্ধতীসহ ২ শতাধিক বিশিষ্টজন

দেশদ্রোহিতা আইনের আওতায় দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা উমর খালিদের মুক্তির দাবি তুলেছেন স্বনামধন্য মার্কিন বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক নোম চমস্কি, বুকারজয়ী উপন্যাসিক ও ভারতীয় বুদ্ধিজীবী, সালমান রুশদি, মীরা নায়ারসহ ২০০ জনের বেশি সাহিত্যিক, পরিচালক, শিক্ষাবিদ ও সমাজের অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দিল্লির সহিংসতায় ভূমিকা রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এই ছাত্রনেতার মুক্তির দাবি জানান তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এখবর জানিয়েছে।

3

ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিসংতার ঘটনায় নিহত হন ৫৩ জন। দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অভিযোগ, ধারাবাহিক সহিংসতার ঘটনায় উমর খালিদ ছিলেন অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। সহিংসতার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ ছিল উমর খালিদের। দু’জনে মিলে পরিকল্পনা করে সহিংসতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করেছেন। ওই সময় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ দায়ের হয় উমর খালিদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর উমর খালিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। সকাল থেকে টানা ১১ ঘণ্টা জেরার পর, গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। উমর খালিদের বিরুদ্ধে জমা করা চার্জশিটে ১১ লাখ পাতার নথি জমা করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার উমর খালিদের মুক্তির দাবিতে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ, রামচন্দ্র গুহ, রাজমোহন গান্ধী, ইতিহাসবিদ রমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, চলচ্চিত্র নির্মাতা আনন্দ পাটবর্ধন,অভিনেত্রী রত্না পাঠক শাহ, সাংবাদিক পি সাইনাথ, অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকার, অরুনা রায় প্রমুখ। তারা উমর খালিদের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তকে ‘পরিকল্পিত ডাইনি খোঁজা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিশিষ্টজনদের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘সিএএ ও এনআরসির মতো আইন যেখানে সবাইকে সমান নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হয় না, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য উমর খালিদ ও অন্যান্য যাদের মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানো হয়েছে ভারত সরকারের কাছে তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে দিল্লির সংঘর্ষ কেন হয়েছিল, বা তাতে কাদের হাত ছিল সেই ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি দিল্লি পুলিশের কাছে, যারা দেশের সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে সংঘর্ষে যুক্ত ইন্ধন যোগানোর অভিযোগে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়া সাহসী ও তরুণ শিক্ষাবিদ ও ছাত্রনেতা উমর খালিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সবার সমান নাগরিকত্বের দাবি তুলে উমর খালিদ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশের প্রতি তার কর্তব্য ঠিক কী। এই পদক্ষেপ থেকে তার শিক্ষারও পরিচয় পাওয়া যায়।”

উমর খালিদের গ্রেফতারের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সহিংসতার অভিযোগে মুসলিমদের অন্যায়ভাবে টার্গেট করছে পুলিশ। উমর খালিদ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির শিকার হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উমরকে দিল্লির আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পুলিশি হেফাজত দেন। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অমিতাভ রাওয়াত বলেন, এই মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রযুক্তিগত ডেটা ও অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে উমর খালিদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের প্রয়োজন আছে। ‌‌‌