মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে শনিবার নেপিদোতে বর্ণাঢ্য বার্ষিক কুচকাওয়াজ করেছে। গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক বাহিনীর অভিযানের কারণে এ বছর অনেক দেশই কুচকাওয়াজের ওই রাষ্ট্রীয় আয়োজনে প্রতিনিধি পাঠায়নি। শনিবারের ওই কুচকাওয়াজে মাত্র আটটি দেশের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।
রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া দেশগুলো হচ্ছে রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ড। তবে একমাত্র রাশিয়া বাদে বাকি সাতটি দেশের প্রতিনিধিরা সবাই সামরিক অ্যাটাশে ছিলেন। রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিন যোগ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে।
কুচকাওয়াজ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মিয়ানমারের শনিবারের কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানটি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। জাপানি সাময়িকী নিকেই এশিয়া বলছে, দেশটির বিক্ষোভরত জনগণকে সামরিক বাহিনীর শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে ওই সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।
মিয়ানমারে প্রতিবছর ২৭শে মার্চ দিনটিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানি উপনিবেশের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহের ঘটনার স্মরণে পালন করা হয় দিবসটি। তবে মহামারির কারণে ২০২০ সালে কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং শনিবারের অনুষ্ঠানে রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিনের যোগদানকে স্বাগত জানান। সাধারণত প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক অ্যাটাশে পাঠিয়ে থাকে। তবে এ বছর রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এই আয়োজনে যোগ দেয়নি।
দিবসটিকে ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোর নামে দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর অভিযান জোরদার করা হয়। শনিবার একদিনেই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নারী ও শিশুসহ ১১৪ জন নিহত হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা
মিয়ানমারে শনিবার বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ ডজনখানেক দেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।
রবিবার যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপের সামরিক কর্মকর্তাদের যৌথভাবে দেওয়া বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি পেশাদার সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই কাজকর্মে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। তাদের দায়িত্ব দেশের মানুষকে রক্ষা করা, তাদের ক্ষতি করা নয়।
গত মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ করে আসছেন। এর মধ্যে শনিবার একদিনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১১৪ জন নিহতের পর বিরল এই বিবৃতি আসলো। যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, মিয়ানমারে শনিবারে প্রাণহানির ঘটনায় আতঙ্কিত ওয়াশিংটন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শনিবারের ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বার্মার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এসব সমালোচনায় যোগ দেয়নি চীন বা রাশিয়া। এর মানে হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হবে। কারণ সেখানে চীন-রাশিয়ার ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষও এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনাকে কোনও ধরনের গুরুত্ব দেয়নি। সূত্র: বিবিসি।