আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে ‘কঠিন পরীক্ষা’র মুখে ত্রাণ সংস্থাগুলো

বিশ বছর যুদ্ধের পর গত মাসে মার্কিন ও ন্যাটো জোটের সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। ‘পরিত্যক্ত’ আফগানিস্তানে থাকেননি পশ্চিমাদের কোনও কূটনীতিক। এমনকি আফগান নাগরিকদেরও দেশ ছাড়ার ঢল নামে। কিন্তু তালেবানের কাবুল দখলের পরও দেশটিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কয়েকটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার প্রধান।

দুই দশক ধরে সারা বিশ্বের সামরিক ও কূটনীতিক শক্তি কাবুলের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে বসবাস করেছে। কিন্তু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো আফগানিস্তানজুড়ে দারিদ্র নিরসনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কয়েকটি জায়গায় স্কুল থেকে শুরু করে হেলথ ক্লিনিক পর্যন্ত সবকিছুই বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্তত ছয়টি প্রদেশে নারীদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কয়েকটি স্থানে তালেবান অলাভজনক সংস্থাগুলোতে গিয়ে কর্মী এবং সম্পদের হিসেব চেয়েছে।

অলাভজনক সংস্থাগুলো তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রয়েছে। তবে এই সম্পর্ক স্থাপনে কঠিন শর্ত দেওয়া হচ্ছে। নারীদের কাজে যেতে না দেওয়া কেবল তাদের অধিকার হরণই নয়, বরং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ত্রাণ বন্টনও। কেবল নারীরাই মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের প্রয়োজন জানতে পারে। অন্যদের এই কাজে নিয়োগ করা হলে ত্রাণ বিতরণে বৈষম্যের আশঙ্কা রয়েছে।

এই মুহূর্তে যখন অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে আফগানিস্তান ত্রাণ সবচেয়ে বেশি দরকার, সেই সময়েই তাদের কূটনৈতিক দক্ষতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এখন তারাই হয়ে উঠেছেন আফগানিস্তানে গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতিনিধি। এছাড়া হাজার হাজার আফগান কর্মী সেদেশে কীভাবে কাজ করবেন তা নিয়ে দর কষাকষির মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিও তারা।

এবারের সংকটে দাতা সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বড় প্রাথমিক উদ্বেগ ছিল লুট ঠেকানো। তালেবান তাদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে বলে। এমনকি সশস্ত্র লোকেরা এলে ফোন করার জন্য নম্বরও দিয়ে যায়। তবে রাজধানীর বাইরে তালেবানের মনোভাব ভিন্ন। আর সেকারণেই দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে মাত্র চারটিতে কাজ শুরু করতে পেরেছে তারা।

আছে অনিশ্চয়তা

কোনও কোনও দাতা সংস্থায় দেড় হাজারের মতো স্থানীয় কর্মী রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষির মতো খাতে সহায়তা দিয়ে থাকেন এসব কর্মী। অপেক্ষাকৃত বড় সংস্থাগুলো বলছে তারা কখনোই পাততাড়ি গোটানোর কথা চিন্তাও করেনি। এর বদলে বিদেশি সরকার ও সংস্থার হয়ে কাজ করা হাজার হাজার কর্মীকে চলে যেতে দেখেছেন তারা।

একটি দাতব্য সংস্থার কান্ট্রি পরিচালক বলেন, ‘যখন তারা (তালেবান) কাবুলে ঢুকে পড়লো তখন তিন দিন পর্যন্ত আমি কিছু খেতে বা ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কিত ছিলাম। পুরোটা সময় কর্মীদের সঙ্গে থেকেছি।’

তার অফিসেও কয়েকজন তালেবান সদস্য ঢুকে পড়ে। মৌখিকভাবে তারা বিদেশি কর্মীদের আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে বলে। সে সময় অনেক আফগান কর্মীও চলে গেলেও বেশিরভাগই থেকে যান।

আফগানিস্তানে অবস্থান করে নিজ নিজ সংস্থার ত্রাণ তৎপরতার নেতৃত্ব দেওয়া আট জনের মধ্যে সাত জনই নারী। তাদেরই একজন বলেন, ‘আমরা খুব বেশি সংখ্যক এখানে নেই। কিন্তু অনেক অনিশ্চয়তা আছে।’

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘আমাদের সম্পৃক্ত হওয়া দরকার, কেননা এটা সম্পৃক্ত হওয়ার এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়।’

‘কিন্তু আমার মনে হয় বিচারের জন্য আমাদের একটু রক্ষণশীল হওয়া দরকার’, বলেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে।