তালেবান সরকার ঘোষণার পরপরই দিল্লিতে সিআইএ ও রাশিয়ার এনএসএ প্রধান

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সরগরম ভারত। ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লি পৌঁছান রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) প্রধান। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) প্রধানও প্রায় কাছাকাছি সময়ে সেখানে পৌঁছান। উভয়েই পৃথকভাবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।

বুধবার দুপুরে দিল্লিতে বৈঠক করেন রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিকোলাই পাত্রশেভ ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন নিকোলাই।

দিন কয়েক আগেই আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ওই ফোনালাপের পরই দুই দেশের মধ্যে এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।

বুধবারের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্র বলছে, মূলত আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়েই কথা হয়েছে।

রাশিয়া সম্প্রতি তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। আফগানিস্তানে দেশটির দূতাবাসও বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু মস্কো আশা করেছিল, তালেবান সব পক্ষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার  গঠন করবে। কিন্তু মঙ্গলবার দলটি যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছে মস্কো তাতে খুশি নয় বলে জানা গেছে। ভারতের সঙ্গে বৈঠকেও এই বিষয়টি সামনে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের দিক থেকে বৈঠকে আফগানিস্তান পরিস্থিতি, দেশটিতে পাকিস্তানের ভূমিকা, চীনের অবস্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

দুই দেশ এই বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি ভারতীয় উপমহাদেশের শান্তিতে ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দিল্লি। বিশেষ করে কাশ্মিরে তালেবানের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে মোদি সরকারের।

শুধু রাশিয়া নয়, মঙ্গলবার অত্যন্ত গোপনে অজিত দোভাল বৈঠক করেছেন সিআইএ প্রধান উইলিয়াম জে বার্নসের সঙ্গেও। বুধবার এ খবর জানা যায়। এদিনও দিল্লিতেই আছেন উইলিয়াম। আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে পারেন তিনি। সিআইএ প্রধানও মূলত আফগানিস্তান নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও দিল্লি কিংবা ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

সম্প্রতি গোপনে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন সিআইএ প্রধান। দেশটি থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়েই তিনি আলোচনা করেছিলেন বলে জানা গেছিল। তবে তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের পরদিনই তার ভারত সফর অন্য বার্তা বহন করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। দলটির নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও সন্তুষ্ট নয়। সূত্র জানিয়েছে, দিল্লিতে আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন সিআইএ প্রধান।

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ অনেক পুরনো। আইএসআই-ও দলটির পেছনে রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ভারত এ বিষয়ে অভিযোগ করেছে।

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল দিল্লি। সেই পরিস্থিতিতে একই দিনে সিআইএ প্রধান এবং রাশিয়ান এনএসএ প্রধানের দিল্লিতে উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সূত্র: ডিডাব্লিউ।