তালেবান খুঁজে পেলে হত্যা করবে, আতঙ্কে সমকামীরা

আফগানিস্তানে কৈশোর পার করায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে রাবিয়া বালখি। সমকামী সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা দেশটিতে জন্ম নেওয়ার পরও তার পরিবার লেসবিয়ান হিসেবে তাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন বালখি বলছেন, এই বিরল মেনে নেওয়ার ঘটনাই তার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান গোষ্ঠী দেশটির গে, লেসবিয়ান ও রূপান্তরকামীদের বিরুদ্ধে শারীরিক সহিংসতা ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পরই বালখি ও তার পরিবার আত্মগোপনে চলে যান। দেশটি ছাড়তে বাইরের সহযোগিতা চাওয়া কয়েকশ’ সমকামী মানুষদের একজন তিনি।

অজ্ঞাত স্থান থেকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্ক এখন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এতই উদ্বিগ্ন যে এখন আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।

বালখি জানান, তালেবান আমার পরিবার সম্পর্কে সব জানে। তিনি আশঙ্কা করছেন, তার পরিবার হামলার শিকার হতে পারে কিংবা সমকামী হওয়ায় তাকে হত্যা করা হতে পারে। তিনি আতঙ্কে রয়েছে, তালেবান তাকে খুঁজে পেলে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।

যদিও আফগানিস্তানের এলজিবিটিকিউ নাগরিকদের বিরুদ্ধে তালেবান কঠোর ধর্মীয় আইন জারি করবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জুলাই মাসে একটি জার্মান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক তালেবান বিচারক বলেছিলেন, সমকামিতার মাত্র দুই ধরনের শাস্তি রয়েছে। একটি হলো পাথর নিক্ষেপ, অপরটি হলো দেয়ালে পিষে হত্যা করা।

এই বিষয়ে এক তালেবান মুখপাত্রের মন্তব্য চাইলে তিনি জানান, এই সম্প্রদায় নিয়ে সরকারিভাবে কোনও পরিকল্পনা এখনও নাই। কিছু অগ্রগতি ঘটলে জানানো হবে।

তালেবানের মতে, শরিয়াহ আইন অনুসারে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কয়েকজন সিএনএনকে জানান, তারা জানতে পেরেছেন তাদের বন্ধু, পার্টনার ও এই সম্প্রদায়ের মানুষ হামলা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তালেবান শাসকরাও তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে বলে তারা আতঙ্কিত।

কয়েকজন জানান, তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি বেজমেন্টের একটি রুমে দেয়াল বা ফোনের স্ক্রিনের দিকে অনির্দিষ্টকাল তাকিয়ে থাকছেন। যদি বাইরে বের হওয়ার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অনেকে বন্ধুদের সহযোগিতায় লুকিয়ে আছেন। অনেকেই আছেন একা, ফুরিয়ে গেছে খাবার।

তবে সবাই বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের পরিত্যাগ করেছে বলে অনুভব করছেন তারা। সূত্র: সিএনএন