চীনের সিচাংয়ের আখরোট কাঠের বাটি

চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দক্ষিণ পশ্চিমের সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আর সেই ঐতিহ্যের হাত ধরেই অঞ্চলটিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও বাণিজ্য। এ তালিকায় থাকা অনন্য একটি সামগ্রী হলো আখরোট কাঠের বাটি। দক্ষ কারিগরের নিপুণ হাতে তৈরি পুরনো আখরোট কাঠ দিয়ে তৈরি এ বাটিগুলো সিচাংয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন যেমন বদলে দিচ্ছে, তেমনি এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও তুলে ধরছে বিশ্ব দরবারে। 

শেষ ধাপে দক্ষ কারিগররা কাঠের টুকরোয় ফুটিয়ে তোলেন সুন্দর বিন্যাস। ছবি: সিএমজি

সিচাংয়ের গায়াকা কাউন্টিতে আছে অনেকগুলো সুপ্রাচীন আখরোট গাছ। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গাছ আছে যেগুলোর বয়স হাজার বছরেরও বেশি।

এ কাউন্টির অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করছে এ গাছগুলোর ওপর। এ গাছগুলোর কাঠই মূলত এ স্থানটিকে দিয়েছে অনন্য এক সাংস্কৃতিক পরিচয়। আখরোট গাছের কাঠ দিয়ে এখানে বানানো হয় বিশেষ এক ধরনের বাটি।

জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয় উপযুক্ত কাঠ নির্বাচনে। ছবি: সিএমজি

বাটিগুলো তৈরির জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয় উপযুক্ত কাঠ নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে। এরপর খোদাই ও পলিশিং পর্যন্ত আটটি ধাপ পার করতে হয়। শেষ ধাপে দক্ষ কারিগররা কাঠের টুকরোয় ফুটিয়ে তোলেন সুন্দর বিন্যাস। সব মিলিয়ে একটি বাটি তৈরিতেই লেগে যায় দুই মাস। যে বাটি তৈরিতে যত পুরনো গাছের কাঠ ব্যবহার করা হবে, সেটাই হয়ে যায় বেশি কাঙ্ক্ষিত ও বেশি দামি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় কারিগর সাংচুর মতো অনেকেই উত্তরাধিকারসূত্রে আখরোট কাঠের বাটি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন ১৬ বছর বয়স থেকেই।

সাংচু তার পারিবারিক কর্মশালাকে বানিয়েছেন একটি সাংস্কৃতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। তিনি এখন এ বাটিতে আধুনিক নকশার সঙ্গে যোগ করছেন ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প।

যত পুরনো গাছের কাঠ, তত বেশি কাঙ্ক্ষিত ও বেশি দামি। ছবি: সিএমজি

সাংচু জানালেন, ‘২৬ বছর ধরে কাঠের বাটি তৈরি করে আসছি। এখন আমি নকশায় আরও সৃজনশীল হতে চাই। এমন কিছু ছোট বাটি তৈরির কথা ভাবছি যা পর্যটকদের জন্য স্যুভেনির হিসেবে কেনা সহজ হবে বা তারা তাদের বাড়িতে প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারবে। অনলাইনেও প্রচার করছি, যার কারণে আমাদের বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে।’

স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও দিচ্ছেন সাংচু। এতে করে এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানেরও নতুন পথ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় কারিগর সাংচু। ছবি: সিএমজি

তার এক কর্মী কেসাং জানালেন, ‘গত দুই মাস ধরে এখানে আমি কাঠের বাটি তৈরির ধাপ আয়ত্ত করেছি। উপকরণ নির্বাচন থেকে প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত সব শিখেছি। এখানে কাজ করে এখন মাসে প্রায় ৯ হাজার ইউয়ান আয় হয়।’

ঐতিহ্যবাহী আখরোট কাঠের বাটি একসময় সিচাংয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ ছিল। পর্যটনের সমৃদ্ধির ফলে এই শিল্প এখন স্থানীয় কারিগর ও শিল্পকারখানার জন্য নতুন বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন করেছে।

সূত্র: সিএমজি