করোনা মহামারির পর প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন একদল বিদেশি পর্যটক। গত পাঁচ বছরে রাশিয়ার একদল পর্যটক ছাড়া আর কোনও বিদেশি দেশটিতে প্রবেশ করেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফর ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্প পুনরায় চালু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে চাইছে, যা তার সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
বেইজিংভিত্তিক ট্রাভেল কোম্পানি কোরিও ট্যুরস জানিয়েছে, তারা ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাসন শহরে ১৩ জন বিদেশি পর্যটকের পাঁচ দিনের সফরের ব্যবস্থা করেছে। রাসনে উত্তর কোরিয়ার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল অবস্থিত। কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সাইমন ককারেল বলেছেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, গ্রিস, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালির পর্যটকরা স্থলপথে চীন থেকে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন। রাসনে তারা কারখানা, দোকান, স্কুল এবং উত্তর কোরিয়ার সাবেক নেতা কিম ইল সুং ও কিম জং ইলের মূর্তি পরিদর্শন করেছেন।
ককারেল বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে উত্তর কোরিয়া সব ধরনের আন্তর্জাতিক পর্যটকের জন্য বন্ধ ছিল। আমরা আনন্দিত যে অবশেষে উত্তর কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলের রাসন এলাকায় একটি সুযোগ পেয়েছি। আমাদের প্রথম ট্যুর শেষ হয়েছে এবং এখন আরও পর্যটক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য যাচ্ছেন।
মহামারি শুরুর পর উত্তর কোরিয়া দ্রুত পর্যটক নিষিদ্ধ করে, কূটনীতিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয় এবং সীমান্ত চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করে। তবে ২০২২ সাল থেকে দেশটি ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে এবং সীমান্ত খুলে দিতে শুরু করে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর কোরিয়া প্রায় ১০০ রুশ পর্যটককে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়, যারা মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশটিতে ভ্রমণকারী প্রথম বিদেশি নাগরিক। এই সিদ্ধান্ত অনেক পর্যবেক্ষককে অবাক করে, কারণ তারা ধারণা করেছিলেন যে মহামারি পরবর্তী প্রথম পর্যটকরা চীন থেকে আসবেন। চীন উত্তর কোরিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও প্রধান মিত্র।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিফিকেশন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৮৮০ জন রুশ পর্যটক উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করেছেন। তবে চীনের গ্রুপ ট্যুর এখনও স্থবির রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইঙ্গিত দেয় উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া কতটা কাছাকাছি এসেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করতে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ করেছে। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়েছে, কারণ চীন উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী জোটে যোগ দিতে অনিচ্ছুক।
মহামারির আগে, পর্যটন উত্তর কোরিয়ার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি সহজ ও বৈধ উৎস ছিল। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি উত্তর কোরিয়া।
জুন মাসে উত্তর কোরিয়া পূর্ব উপকূলে একটি বিশাল পর্যটন স্থান খুলতে যাচ্ছে। জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিম জং উনের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, আমার মনে হয় তার বিশাল কন্ডোমিনিয়াম তৈরির ক্ষমতা আছে। তার অনেক উপকূলরেখা রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজির বিশেষজ্ঞ লি সাংকিউন বলেছেন, চীনা পর্যটকদের ফিরে আসা উত্তর কোরিয়ার পর্যটন শিল্পকে লাভজনক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ মহামারির আগে মোট আন্তর্জাতিক পর্যটকের ৯০ শতাংশের বেশি ছিল চীনা। তিনি বলেন, অতীতে বছরে ৩ লাখ পর্যন্ত চীনা পর্যটক উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করতেন।
লি বলেন, উত্তর কোরিয়া পর্যটন স্থানগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা তেমন নেই। আমরা ধরে নিতে পারি যে, উত্তর কোরিয়া এখন আন্তর্জাতিক পর্যটন পুনরায় চালু করতে চায় এবং বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আনতে চায়।
উত্তর কোরিয়া সাধারণত বিদেশি ভ্রমণকারীদের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় গাইডের সঙ্গে চলাফেরা এবং সংবেদনশীল স্থানে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ। এসব বিধি পর্যটন শিল্প বিকাশের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
লি বলেন, রাসন, পূর্ব উপকূল এবং পিয়ংইয়ং এমন স্থান যেখানে উত্তর কোরিয়া সহজেই বিদেশি পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করতে পারে।