কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা

ভারতের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় প্রস্তুত পাকিস্তান

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অজ্ঞাত জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। যদিও পাকিস্তান সরকার বলেছে, তারা উত্তেজনা বাড়াতে চায় না।

ভারত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও গোষ্ঠীকে এই হামলার জন্য দায়ী করেনি। তবে বুধবার (২৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কঠোর প্রতিক্রিয়া ঘোষণা করেছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত,  পাকিস্তানের সিনিয়র কূটনৈতিক কর্মীদের বহিষ্কার ও উভয় দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মী সংখ্যা হ্রাস।

ভারতের এই ঘোষণার পর পাকিস্তান বৃহস্পতিবার দেশটির নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক আহ্বানের ঘোষণা দিয়েছে। ওই বৈঠকে ভারতের পদক্ষেপের জবাব কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

মঙ্গলবার কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ২৬ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার সতর্ক এবং পরিমিত ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে পুরো পাকিস্তানে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ ভারতের কর্মকর্তারা সম্ভাব্য সামরিক হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করছেন।

কাশ্মীর এমন একটি এলাকা. যা দুই দেশই নিজেদের দাবি করে। এই অঞ্চল নিয়ে তারা একাধিকবার যুদ্ধ করেছে। সেই অঞ্চলে সাম্প্রতিক হামলার পর পুরোনো দৃশ্যপট আবারও ফিরে এসেছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতি অনুগত। তারা এই হামলার জন্য দ্রুত পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। অবশ্য পাকিস্তান এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, কাশ্মীরে নিরাপত্তার ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তাদের দিকে আঙুল তুলছে ভারত। 

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সর্বশেষ জঙ্গি হামলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই হামলায় বহু ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন। সেই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত একটি বিমান হামলা চালায়। তবে তা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেওয়ার ঠিক আগেই থেমে যায়।

এবারের হামলার পর পাকিস্তানি বিশ্লেষক সতর্ক করছেন যে বর্তমান সংঘাত ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি তীব্র হতে পারে। ইসলামাবাদের নিরাপত্তা বিশ্লেষক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী বুধবার বলেন, ‘ভারতের উত্তেজনা গত রাতেই শুরু হয়ে গেছে এবং এটি ২০১৯-এর চেয়েও বড় পরিসরে হবে।’

তিনি দাবি করেন, ভারত এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্মতা দেখানোর এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা কমানোর একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়াও, কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ভারতের কোনও সামরিক মোতায়েনের প্রমাণ পাননি। তবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাকিস্তান পাল্টা উত্তেজনা সম্পর্কে সাবধান থাকবে। কিন্তু ভারত যদি কোনও অনুপ্রবেশ ঘটায়, তবে তা প্রতিহত করা হবে।

কিছু সামরিক বিশ্লেষক এবং সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ভারতের বিরুদ্ধে হামলাটি সাজানো বলে অভিযোগ তুলেছেন। কারণ এটি এমন সময় ঘটেছে যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফরে ছিলেন।

জিও নিউজে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ সাঈদ মিনহাস বলেন, ‘তারা কোনও প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে।’

কর্মকর্তারাও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়ে আলাদা। কারণ তখনকার হামলার দায় জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী স্বীকার করেছিল এবং তা ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারের হামলায় নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। দায় স্বীকার নিয়ে কোনও ইঙ্গিত নেই।

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই হামলা নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার হামলায় প্রাণহানির নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। ভারতকে ‘অসময়ে ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ’ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ২০১৯ সালে দুই দেশ সংঘাতের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিল। তবে এবারে সেই সৌভাগ্য নাও হতে পারে।

পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গি বলেন, ‘গত উত্তেজনায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে সৌভাগ্যবান ছিল যে তারা সংঘর্ষ থেকে সরে এসেছিল। এবার আমরা আরও বিপজ্জনক পর্বে আছি।’

তিনি বলেন, একটি ভঙ্গুর বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ভারতের উত্তেজক সংবাদমাধ্যম মোদিকে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। ভারত এই পাগলামি না থামালে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস