পূর্ব নেপালের প্রত্যন্ত গ্রাম সানু দুমা ৯। এখানেই বাবা, মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে ছেলেবেলা কেটেছে মীরার। লিঙ্গবৈষম্যের শিকার নেপালের রীতি মেনে পরিবারের ছেলেরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিল, তার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল গৃহস্থালির কাজের বোঝা। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল, এরপর বিয়ে করে সন্তান প্রসব ও মানুষ করেই জীবন কেটে যাবে। কিন্তু স্বভাব-দস্যি মীরার মগজে ভিন্ন স্বপ্ন ভিড় করত। তীব্র অর্থকষ্ট ও অন্ধকার ভবিষ্যতের চিন্তায় জেরবার হয়ে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ঘরের কোণ থেকে বেরিয়ে এসে মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে পরিচয় হয় মীরার। ২০০৩ সালে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হন সাহসী কিশোরী। সেই সময় নেপালের মাওবাদী যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পদে পদে মৃত্যুভয়, ধরা পড়লে নির্মম অত্যাচারের মতো দৃশ্য দেখে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় হয়ে ওঠেন তিনি। এ সময় মাওবাদী গেরিলাদের মধ্যে প্রচলিত খেলাধুলার প্রতি ক্রমেই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন মীরা। সেখানেই শুরু হয় দৌড়ের প্রথম পাঠ।
২০০৬ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কাঠমাণ্ডুর ক্ষমতায় বসেন এক সময়কার মাওবাদী চরমপন্থী নেতা প্রচণ্ড। সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পর দৌড়ের নেশা পেয়ে বসে। এই সময় ২১ কিলোমিটার রেসে প্রথমবার নাম লেখান মীরা। কিন্তু খালি পেটে সেই দৌড় শেষ করতে পারেননি। ফিনিশিং লাইনের ৪০০ মিটার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
সেই সাফল্যই তার ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়। আয়োজক রিচার্ড বুলের সাহায্যে একের পর এক দৌঁড় জিতে রেকর্ড গড়তে শুরু করেন মীরা রাই। বিদেশের মাটিতেও অব্যাহত থাকে তার এ সাফল্য। চলতি বছরে বিশ্বের অন্যতম কঠিন ৮২ কিলোমিটার মঁ ব্লাঁ স্কাইরানার ওয়ার্ল্ড সিরিজ রেসে অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন মীরা রাই।
বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়ার পর এখন মীরার চৌকাঠে স্পনসরদের ভিড় লেগেই রয়েছে। তবে সাফল্য তার মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেনি। নেপালের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার লক্ষ্যে নিরন্তর পরিশ্রমে মগ্ন বছর ছাব্বিশের এই দৌড়বিদ। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
/এএ/