দক্ষিণ চীন সাগরে মাছের যুদ্ধ

সাগরে সাঁতারের জন্য ফিলিপাইনের সাবাহ প্রদেশের রাজধানী চুম্বকের মতো টানত আন্তর্জাতিক পর্যটকদের। কিন্তু সম্প্রতি সাগর তরঙ্গের আড়ালেও ভয়াবহ অপহরণ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ভয়াবহ এ অপহরণ কর্মকাণ্ড। তবে অন্যান্য মাছ শিকারিদের জন্য এসব অপহরণকারীদের চেয়ে আতঙ্ক হচ্ছে চীনের মাছ শিকারিরা।  দক্ষিণ চীন সাগরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে যেন এক যুদ্ধ চলছে। চীন ও ফিলিপাইন ছাড়াও এতে জড়িত হয়ে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মাছ শিকারি এবং কোস্টগার্ড।

ফিলিপাইনের বন্দর নগর মিরির বাসিন্দা ও মাছ শিকারি জামালি বাসরি জানান, প্রায় ১ হাজার মৎস্যজীবী চীনা গানবোটের আতঙ্কে দিন কাটায়। মিরির উপকূল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে মাছ শিকারের জন্য ঐতিহ্যবাহী লুকোনিয়া শোয়াল এলাকায় চীনা মাছ শিকারিরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শণ করছে। তারা ইন্দোনেশীয় মাছ ধরার নৌকা ডুবিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই শুনি চীনারা ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মাছ ধরার নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। আমরা আতঙ্কিত কারণ আমাদের নৌবাহিনী কিছুই করছে না। নৌ বাহিনী যদি সাগরে তাদের অবস্থান প্রদর্শণ করতো তাহলে আমাদের মাছ শিকারিরা সাহস পেতো।’

২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ১৫৩টি মাছ ধরার জাহাজ আটক করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামের ৫০টি, ফিলিপাইনের ৪৩টি ও চীনের একটি।  মাছ শিকার বন্ধে ইন্দোনেশিয়া নিয়মিত এসব নৌকা সাগরে উড়িয়ে দিচ্ছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। মালয়েশিয়ার সারাওয়াক উপকূলের খুব কাছে ১০০টি চীনা মাছ ধরার নৌকার উপস্থিতির পরই এ তলব করা হয়।

মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিকারিরা নিজ দেশের জলসীমা অতিক্রম করে ঝুঁকি নিয়ে অন্য দেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরতে শুরু করেছে। গত মাসে আর্জেন্টিনা নিজ জলসীমায় মাছ শিকারের অভিযোগে চীনের একটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, গত বছর মাছের চাহিদা ছিল প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারের।

চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাবার হিসেবে মাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন টন মাছ শিকার করা হয়। যা বিশ্বে মাছ শিকারের ১২ শতাংশ। তবে সত্যিকার অর্থে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। কারণ এখানে অবৈধভাবে মাছ শিকারের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সূত্র: দ্য ইনকোয়ারার।

/এএ/বিএ/