মসজিদ ভাঙা ঠেকাতে চীনে মুসলিমদের সমবেত প্রতিবাদ

চীনে একটি মসজিদ ভাঙা ঠেকাতে প্রতিবাদে সমবেত হয়েছেন স্থানীয় মুসলিমরা। পশ্চিমাঞ্চলীয় চীনের নিনঝিয়া প্রদেশের উয়েইঝু গ্রান্ড মসজিদ নামের ওই মসজিদটি প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও নির্মাণ অনুমোদন মেনে তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ। গত ৩ আগস্ট এক নোটিশে কর্মকর্তারা জানান, মসজিদটি ভেঙে ফেলা হবে। কয়েকটি মিনার ও গম্বুজের সমন্বয়ে মধ্যপ্রাচ্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ভেঙে ফেলার বিরোধীতায় নেমেছে স্থানীয় মুসলিমরা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে শুক্রবারও সেখানে অবস্থান নেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর জানিয়েছে।

_102906852_b9ff87db-7c90-4364-9b49-e54704d2ab08

চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমানের বাস। শত শত বছর ধরে নিনঝিয়া প্রদেশে বসবাস করে আসছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, চীনে মুসলিমদের ওপর সরকারি বৈরি আচরণের ঘটনা বাড়ছে। মসজিদ ভাঙার বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, মসজিদে সরকারকে হাত দিতে দেওয়া হবে না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত ৩ আগস্ট চীনা কর্তৃপক্ষ মসজিদ ভাঙার নোটিশ দিলে আদিবাসী হুই সম্প্রদায়ের মুসলিমদের মধ্যে অনলাইনে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যদি সংশ্লিষ্ট অনুমোদন ছাড়া মসজিদটি নির্মিত হয় তাহলে দুই বছর ধরে কাজ চলার সময়েই তা কেন বন্ধ করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার মসজিদের সামনে জড়ো হতে থাকেন প্রতিবাদকারীরা। শুক্রবারও চলে বিক্ষোভ। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, সাদা মসজিদটির সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, হুই সম্প্রদায় ও সরকারের মধ্যকার আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, আমরা শুধু অবরোধ করে আছি। মানুষ চায় না সরকার মসজিদে হাত দিক, কিন্তু সরকার পিছু হটছে না।

তবে শুক্রবারই মসজিদটি ভাঙার কাজ শুরু হবে কিনা তা এখনও পরিস্কার নয়। এখনও কোনও সমঝোতাতেও পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মসজিদটি পুরোপুরি ভাঙা হবে না। রয়টার্সকে তিনি বলেন, সরকার চায় এর আয়তন কমিয়ে পুনর্নির্মিত হোক। তবে এই বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কোনও মন্তব্য করেনি।

বিবিসি বলছে, সাংবিধানিকভাবে চীনে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও কার্যত এখনও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এর আগে চীনের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চার্চের ছাদের ওপর থেকে ক্রস জোর করে নামিয়ে ফেলা হয়। সেক্ষেত্রেও সরকারের তরফে বলা হয়েছিল ওই প্রতীকটি পরিকল্পনানীতি অনুযায়ী হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বিদেশি ধর্মীয় প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন ‘সিনিসাইজ রিলিজিওন’ নামে এক প্রচারণা শুরু করেছে যাতে বলা হচ্ছে ‘ধর্মকে যতটা পারো চীনের মতো করে নাও’। ওই প্রচারণার অংশ হিসেবে অনিবন্ধিত চার্চ হাউসকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, চীনা খ্রিস্টান প্রার্থনাকারীদের বিদেশে পাচারে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।

তবে হুই মুসলিমরা ধর্মীয় আচরণ পালনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন। পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নানা সরকারি চাপের ঘটনা ঘটলেও হুই মুসলিমরা তা থেকে অনেক বেশি মুক্ত বলে মনে করা হতো।