জাতিসংঘের প্রতিবেদন ‘সহযোগিতার দরজা বন্ধ’ করে দিয়েছে: চীন

উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং অঞ্চল সম্পর্কে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সংস্থাটির সঙ্গে চীনের ‘সহযোগিতার দরজা বন্ধ’ করে দিয়েছে। শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন জু। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

রাষ্ট্রদূত চেন জু বলেন, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরকে বেইজিং আর সহযোগিতা করবে না।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জিনজিয়াংয়ে উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলমানদের আটক করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হতে পারে।

ওই প্রতিবেদনটি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বেইজিং। এটি প্রকাশের পর তাই ক্ষুব্ধ চীনা রাষ্ট্রদূত চেন জু সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতর কথিত মূল্যায়ন প্রকাশ করে সহযোগিতার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট তার চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করছে বেইজিং।

মিশেল ব্যাচেলেটের প্রতিবেদনে কথিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কারাগারে আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চীনা রাষ্ট্রদূত চেন জু জানিয়েছেন, তিনি সেই অধিবেশনে চীনের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপের জোরালো বিরোধিতা করবেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর ওএইচসিএইচআর-এর একজন মুখপাত্র চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার সেখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে ব্যাপকভাবে খবর আসছে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে বেইজিং। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন, জিনজিয়াং-এর বিভিন্ন বন্দিশিবিরে অন্তত ১০ লাখ মুসলিমকে আটক করে রেখেছে চীন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে চীন বরাবরই মুসলিমদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।