কালজয়ী নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের বহুল পরিচিত একটি চরিত্র হচ্ছে শাইলক। চরিত্রটি ছিল এক অতিলোভী সুদখোরের, যে ধর্মীয় পরিচয়ে ইহুদি। কে জানত, কথায় কথায় এই চরিত্রের রেফারেন্স টেনে নিজ দেশেই তোপের মুখে পড়বেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!
নিজের বহুল আকাঙ্ক্ষিত কর হ্রাস ও ব্যয় সংকোচন বিলের গুরুত্ব বোঝাতে কিছু ঋণদাতাকে মধ্যযুগীয় চরিত্র শাইলকের সঙ্গে তুলনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এই বক্তব্যের জেরে তার বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তোলে একটি মহল। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প তার 'বিগ বিউটিফুল বিল' স্বাক্ষরের প্রাক্কালে এস্টেট ট্যাক্সে (স্থাবর সম্পত্তি কর) পরিবর্তনের প্রশ্নে তিনি বলেন, একবার ভাবুন, কোনও ডেথ ট্যাক্স, স্টেট ট্যাক্স (মৃত ব্যক্তির স্থাবর সম্পত্তির ওপর কর) থাকছে না। (ঋণ নেওয়ার জন্য) কেউ ব্যাংকে গিয়ে কখনও সজ্জন ব্যাংকার আবার কখনও শাইলক আর খারাপ মানুষের দ্বারস্থ হচ্ছেন না।
শেকসপিয়ারের 'দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস'-নাটকের সারমর্ম ছিল, ঋণের অর্থ শোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেনাদারের দেহ থেকে এক পাউন্ড মাংস কেটে নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছিল শাইলক। তবে দেনাদারের বাগদত্তার বুদ্ধির জোরে ওই যাত্রা শাইলকের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।
ইহুদিদের ‘লোভী ও অর্থলোলুপ’ রূপে চিত্রিত করার প্রতীক হিসেবে দেখাতে শাইলক চরিত্রের ব্যবহার হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। তাই ট্রাম্পের ওই রেফারেন্সে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে।
ইহুদি অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগের (এডিএল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেইজে শুক্রবার বলা হয়, বহু শতাব্দী ধরে শাইলক শব্দটি ইহুদি বিদ্বেষের প্রতীক। এটি ইহুদীদের ওপর অতিরিক্ত অর্থসম্পদের লোভ নিয়ে অসম্মানজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ দায় চাপিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তরফে ওই রেফারেন্স ব্যবহার একই সঙ্গে দুঃখজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।
তবে শাইলকের সঙ্গে ইহুদি বিদ্বেষের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন না ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, যেসব মানুষ উচ্চ হারে ঋণ দেয়, শাইলক হচ্ছে তাদের প্রতীক। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমি এমন কিছু (ইহুদিদের অসম্মান জানাতে শাইলক শব্দের ব্যবহার) কখনও শুনিনি।
তবে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে সন্তুষ্ট হননি অনেকে। তাদের একজন হলেন নিউ ইয়র্কের আইনপ্রণেতা ড্যান গোল্ডম্যান, যিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্য এবং ধর্মপরিচয়ে ইহুদি।
ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করে গোল্ডম্যান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভালোমতোই জানেন তিনি কী বলছেন। তার বক্তব্য প্রকাশ্য ইহুদিবিদ্বেষ। যারা ইহুদি বিদ্বেষের প্রকৃত বিরোধী, তারা যেখানেই এর আভাস দেখেন, আমার মতো প্রতিবাদ করেন।
উল্লেখ্য, একই শব্দ ব্যবহারের কারণে ২০১৪ সালে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি বলেছিলেন, বিদেশে থাকা মার্কিন সেনা সদস্যদের ঋণের ফাঁদে ফেলে 'শাইলকেরা তাদের সুযোগ নিচ্ছে'। তার বিরুদ্ধেও সরব হয় এডিএল। চাপে পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে বাইডেন বলেন, তার মন্তব্যটিতে শব্দ চয়নের ভুল ছিল। এরপর এডিএলের তরফ থেকে বলা হয়, বাইডেনের মধ্যে কোনও ইহুদি বিদ্বেষ ছিল না।