ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় যুদ্দবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রস্তাবে হামাসের ইতিবাচক সাড়ার পর এ কথা বলেন তিনি। আরব নিউজে শুক্রবার (৪ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।
প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ানে আরোহনের আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেছেন, আগামী সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তি হতে পারে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, আলোচনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন প্রস্তাব যাচাই করে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইতিবাচক সাড়া প্রদান করেছে হামাস। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির কাঠামো প্রয়োগের বিস্তারিত সমঝোতার জন্য তাতক্ষণিকভাবে আলোচনায় বসতে হামাস প্রস্তুত আছে।
এক হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চান তারা।
এর আগে, শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এবারের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায় হামাস। ওইদিন অন্তত ১২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয় বলে দাবি করে আসছে নেতানিয়াহু সরকার। এই হামলার জবাবে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, গাজায় হামাসের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রাথমিক শর্তে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। এই সাময়িক বিরতির সময় যুদ্ধ পুরোপুরি অবসান নিশ্চিতে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট পক্ষরা।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের প্রস্তুতি তাদের দিকে প্রায় চূড়ান্ত। একাধিক সূত্র বলছে, শুক্রবারের মধ্যে হামাস ইতিবাচক সাড়া দিলে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা বলেছেন, ১০ জন জিম্মি এবং ১৮ জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টি প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত আছে। হামাসের হাতে এখনও অর্ধশত জিম্মি আছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে জনা বিশেক জীবিত আছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েল।
ওই ব্যক্তির বরাতে জানা যায়, প্রস্তাবে আরও রয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারও শুরু করা হবে। স্থায়ী যুদ্ধাবসানের বিষয়েও এই সময়ের মধ্যে আলোচনা শুরুর পরিকল্পনা রাখা হয়েছে প্রস্তাবে।
প্রাথমিকভাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রয়োজনে সময়সীমা বৃদ্ধি হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আলোচনার মধ্যেও থেমে নেই সংঘাত। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ত্রাণ নিতে গিয়ে শুক্রবার অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত এক মাসে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৬১৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও হামাসের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে গেছে। হামাসের পুরো নির্মূল এবং তাদের অস্ত্রত্যাগ নিশ্চিত না হলে যুদ্ধ থামাতে চায় না ইসরায়েল। আর ইসরায়েলি সেনা গাজা থেকে পুরো প্রত্যাহার ছাড়া আলোচনা হবে না বলে গোঁ ধরে আছে হামাস।