প্যারিসে পুলিশ-‘ইয়েলো ভেস্ট’ সংঘর্ষ, আজ রাতে বড় কিছুর আশঙ্কা

শনিবার (০৮ ডিসেম্বর) ফরাসি দাঙ্গা পুলিশ ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ানোয়, সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেনন আজ রাতে বিক্ষোভ প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। মধ্য প্যারিসে আজ বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে চেষ্টা করে। এতে আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ছোট ছোট অংশে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা গাড়ি, কাঠের শাটারসহ বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছে ৩০ জনের মতো।00

ফ্রান্স জুড়ে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, শনিবার প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছন প্রায় আট হাজার ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারী। এদের মধ্যে ৬০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৫০০ জনকে পুলিশ হাজতে রেখেছে। কারণ এদের কাছে হাতুড়ি, বেসবল ব্যাটসহ পেটাঙ্ক খেলায় ব্যবহৃত ধাতব বল উদ্ধার করা হয়েছে। তারা যাতে ছুঁড়ে মারতে না পারে সে জন্য সামনে থেকে সরিয়ে ফেল হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী । প্যারিস ও ল্যুভর জাদুঘরের মতো পর্যটনকেন্দ্র গুলো বন্ধ রয়েছে। পর্যটকদের রাস্তায় বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্যারিসের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করেছে। এমন কি আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফরাসি পুলিশ ঘোড়ায় চড়েও তাদের তাড়া করেছে। পুলিশ দাবি করছে, শনিবারের ঘটনায় তুলনামূলকভাবে কম সহিংসতা হয়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। ওই সময় শতাধিক গাড়িও পুড়িয়েছিল আন্দোলনকারীরা। সেসময়কার লুটপাটকে ১৯৬৮ সালের দাঙ্গা–লুটপাটের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হিসেবে চিহ্নিত করে হয়েছে।

কিন্তু আন্দোলনকারীদের একজন বলেছেন, ‘আমাদেরকে হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তারপরও তারা টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে। আমি বলছি, আজ রাতে অনেক বড় কিছু হবে।’ পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রও একই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। তার ধারণা, রাত বাড়লে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে মোড় নেবে।

আন্দোলনকারীরা ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে চলা এই বিক্ষোভকে আখ্যা দিয়েছে ‘অ্যাক্ট ফোর,’ যেন এটা কোনও নাটকের চতুর্থ অঙ্ক। বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কারণে প্যারিস পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। দোকান-পাট সব বন্ধ। অথচ এখন বড়দিনের মৌসুম। ব্যাবসা-বাণিজ্য তুঙ্গে থাকার কথা।

ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন শুরু হয় গত নভেম্বরে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে প্রশমিত করতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে ফরাসি সরকার। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে চাপ পড়েছে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। এর প্রতিবাদে আন্দোলন সংগঠিত হয়। আইন অনুযায়ী, আলো বেশি আলো প্রতিফলিত করে এমন এক ধরনের বিশেষ নিরাপত্তামূলক জ্যাকেট গাড়িতে রাখতে হয় ফরাসি চালকদের। এর রঙ সবুজাভ হলুদ। আন্দোলনকারীরা এই জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের নাম হয়ে যায় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারী।

ফরাসি সরকার বলছে, আন্দোলনটি সাধারণ সংক্ষুব্ধ সাধারণ ফরাসিদের দ্বারা সংঘঠিত হলেও, এখন সেটি চরম ডানপন্থী এবং নৈরাজ্যবাদীদের দখলে চলে গেছে। তারা সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। আন্দোলনের মুখে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও, ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কর হার কমানো, বর্ধিত হারে নূন্যতম আয় নিশ্চিত করা, জ্বালানির মূল্য আরও কমানো, অবসারকালীন সুবিধা বাড়ানো এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের মতো দাবি এখন যুক্ত হয়েছে তাদের তালিকায়।

0209

0410

0106