করোনা শনাক্তে যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পেলো রোশ’র অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট

আন্তর্জাতিক বায়োটেক কোম্পানি রোশ’র অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জরুরিভিত্তিক অনুমোদন পেয়েছে। কোনও ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে। রবিবার (৩ মে) এক বিবৃতিতে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানিটি এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই অ্যান্টিবডি টেস্টে ১৮ মিনিটের মধ্যে ধরা পড়বে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। ঘণ্টায় ৩০০টিরও বেশি টেস্ট করা যাবে এই কিট দিয়ে। পরীক্ষার ফলও হবে নির্ভুল।

download (2)

রোশ ডায়গনস্টিকস’র প্রধান টমাস শিনেকার জানান, তাদের কোম্পানি এই টেস্ট কিটের উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে। এই বছরের শেষ দিকে প্রতি মাসে উৎপাদন ৫ কোটি থেকে ১০ কোটিতে পৌঁছাবে। কিটটির নাম এলেকসিস অ্যান্টি-সার্স-কোভ-২ অ্যান্টিবডি টেস্ট। এই কিটটি রোশ’র কোবার ই এনালাইজারে ব্যবহার করা যাবে। যা বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত।

সুইজারল্যান্ডের বাসেলভিত্তিক কোম্পানিটি জানায়, তাদের এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় সুনির্দিষ্টতার হার ৯৯.৮ শতাংশের বেশি এবং সেনসিভিটি ১০০ শতাংশ। এর অর্থ হলো পরীক্ষায় খুব কম ভুল পজিটিভ ফল আসবে এবং কোনও ভুল নেগেটিভ ফল আসবে না।  

ভুল নেগেটিভ ফল আসলে ধরে নেওয়া হয় কোনও ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এতে করে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একটা বড় অংশের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। আর উপসর্গ দেখা না গেলে তো কেউ পিসিআর টেস্ট করাতে যায় না। ফলে এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি টেস্ট কাজে লাগবে। কারণ, এই টেস্টের ফলাফল যদি পজিটিভ হয়, তাহলে সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না।

রোশ জানায়, শিরা থেকে নেওয়া রক্তের মাধ্যমে এই পরীক্ষা করতে হয়। যাতে আঙুল থেকে নেওয়া রক্তের পরীক্ষার চেয়ে বেশি সঠিক ফল পাওয়া সম্ভব।

শিনেকার বলেন, যখন আঙুল থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় তখন শিরা থেকে সংগৃহীত রক্তের তুলনায় সুনির্দিষ্ট মাত্রার ফলাফল অর্জন করা যায় না। এক্ষেত্রে অনেক বেশি সুনির্দিষ্টতা প্রয়োজন হয়। এমনকি ০.১ বা ০.২ শতাংশ ভিন্নতাও পার্থক্য গড়ে দেয়।

2720bd88-4482-4806-b703-7fa0dd78a65f

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিসিআর পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ার ১৪ দিন পর ৫ হাজার ২৭২ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এই টেস্ট কিট দিয়ে। পরীক্ষার ফল ৯৯.৮% নির্ভুল এসেছে। ১৮ মিনিটের মধ্যেই সংক্রমণ ধরে দিয়েছে এই অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট।

আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ-পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন) হলো এমন একটি টেস্ট যাতে ধরা যায় শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসের জিনোমের প্রকৃতি কী। অর্থাৎ সেটি আরএনএ ভাইরাস কিনা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে আরটি-পিসিআর টেস্টেই নির্ভুল রেজাল্ট পাওয়া যায়। তবে এই টেস্ট করতে বহু সময় লাগে এবং খরচও অনেক। সেখানে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট সংক্রমণের পরীক্ষা করা যায় খুব দ্রুত।

শিনেকার জানান, তাদের গ্রুপের বানানো এই অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট কোভিড-১৯ সংক্রমণ নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করতে পারে। রক্তের নমুনায় যদি করোনার স্ট্রেন না থেকে অন্য কোনও সংক্রমণ থেকে থাকে তাহলে টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। সঠিকভাবে কোভিড-১৯ চিহ্নিত করার মতো করেই বানানো হয়েছে এই টেস্ট কিটকে।

রোশ তাদের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের দাম জানায়নি। তবে তারা বলছে বিশ্বব্যাপী দাম অভিন্ন হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে কিটটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা ও আমদানি সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি তাদের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

এনবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবডি টেস্টে অমীমাংসিত ফল আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দেশে।  রোশ’র শিনেকারও তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছার আগে এই নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে হবে। ভাইরাসটি সম্পর্কে যেহেতু আমাদের আগে থেকে জানা নেই, তাই কেবল হাইপোথিসিস দেওয়া যায়, কিন্তু প্রমাণ দিতে সময় লাগবে। ফলে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করার একমাত্র উপায় পরীক্ষা করা।