মস্কোভা ডুবে যাওয়ায় রাশিয়ার ক্ষতি কতটা?

কৃষ্ণ সাগরে নিজেদের ফ্লাগশিপ জাহাজ বলে পরিচিত মস্কোভা মিসাইল ক্রুজার ডুবে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, জাহাজটিতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এতে থাকা গোলাবারুদ বিস্ফোরিত হয়ে এটি ডুবে গেছে।

ইউক্রেন বলছে তাদের বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মস্কোভা ডুবে গেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য ইউক্রেনের বর্ণনা স্বীকার করেনি। পাল্টাপাল্টি এসব বর্ণনার কোনওটিই স্বাধীনভাবে যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।

জাহাজ ডুবে যাওয়ায় রাশিয়ার সক্ষমতা কমবে?

২০১৪ ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা ক্রিমিয়ায় শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। কিন্তু মস্কোভা দীর্ঘ পাল্লার এবং ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যোগান দিতে সক্ষম ছিল। পুরো কৃষ্ণ সাগরে রুশ বহরের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত মস্কোভা ভাসমান কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। এটি ডুবে যাওয়ায় কৃষ্ণসাগর বহরের প্রতিরক্ষা কমে যাবে, বিশেষ করে দীর্ঘ পাল্লার অভিযানের ক্ষেত্রে।

জাহাজটিতে প্রায় পাঁচশ’ নাবিক ছিলেন। রাশিয়ার দাবি, এসব নাবিককে সফলভাবে সরিয়ে নেওয়া সক্ষম হয়েছে। শুক্রবার ক্রিমিয়ার সিবাস্তিপোল বন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়ার পর মস্কোভা ডুবে যায় বলে দাবি রাশিয়ার। ইউক্রেন ইঙ্গিত দিয়েছে, সিবাস্তিপোলে সম্ভবত রুশ নাবিকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি রাশিয়া।

মস্কোভা ডুবে যাওয়ায় ইউক্রেন সংঘাত কী নতুন মোড় নেবে?

এ ধরনের সম্ভাবনা কম। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ক্ষতির ফলে রাশিয়া সম্ভবত কৃষ্ণ সাগরে নৌবাহিনীর অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোভা ডুবে যাওয়ার প্রতীকি গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া সম্ভবত এর ফলে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি নৌ সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে এতে যুদ্ধের গতিপথ বদলে দেওয়ার মতো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নৌবাহিনী এখন পর্যন্ত বড় কোনও ভূমিকা রাখেনি।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত যুদ্ধজাহাজ কেবল মাঝে মাঝে হামলা চালাতে এবং দক্ষিণাঞ্চলে রসদ পাঠাতে ব্যবহার করেছে। মস্কোভা সমুদ্রে শত্রু জাহাজ ধ্বংসে সক্ষম ছিল। কিন্তু ওই এলাকায় কোনও কিছুই ফেলে যায়নি ইউক্রেনের নৌবাহিনী।

রুশ নৌবাহিনী কি তাদের অভিযানের উপায় বদলাবে?

হ্যাঁ বদলাবে। কিন্তু এই পরিবর্তনকে বড় কোনও ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। মস্কোভায় অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর কৃষ্ণসাগরের উত্তরাংশে থাকা রাশিয়ার পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ উপকূল থেকে সরে গেছে। প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল সরে গেছে তারা। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, এসব জাহাজ দূরে থেকে এখনও ইউক্রেনের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে সক্ষম। এছাড়া দূরে থাকায় এসব রুশ জাহাজে ইউক্রেনীয়দের হামলা চালাতে পারার সম্ভাবনা কম।

এখন পর্যন্ত সংঘঠিত যুদ্ধে মস্কোভার ভূমিকা চিহ্নিত করা গেছে?

এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন ওডেসা বন্দরে সেনা নামানোর রুশ পরিকল্পনায় সহায়তার জন্য ব্যবহার হতে পারতো মস্কোভা। তবে ইউক্রেনীয়দের প্রবল প্রতিরোধের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আর মস্কোভা ডুবে যাওয়ায় ইউক্রেনের কিছু অংশে এই ধরনের হামলার আশঙ্কা কমে গেছে। ফলে ইউক্রেন অন্য কোনও এলাকায় সেনাসদস্যদের পুনরায় মোতায়েনের সুযোগ পাবে।

মস্কোভার সক্ষমতা রাশিয়া সহজেই কী প্রতিস্থাপন করতে পারবে?

না। রাশিয়ার একই ধরনের আরও দুইটি জাহাজ রয়েছে- মার্শাল উস্তিনভ এবং ভারিয়াগ। জাহাজ দুইটি যথাক্রমে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বহরে রয়েছে। বসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা তুরস্ক যুদ্ধের সময় জাহাজ দুটিকে সেখানে প্রবেশ করতে দেবে না।

মস্কোভায় কি অনন্য কোনও অস্ত্র ছিল?

না। এতে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। তবে এতে রাশিয়ার সর্বশেষ প্রজন্মের কালিকার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না।

মস্কোভা কতটা আধুনিক ছিল?

খুব বেশি নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৯৭০-এর দশকের সোভিয়েত ইউনিয়নে এর নকশা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা। প্রায় চার দশক ধরে এটি ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, বেশ কয়েকবার ব্যয়বহুল মেরামতের মধ্য দিয়ে গেছে মস্কোভা। ২০২১ সালে এটি আবার আভিযানিক সক্ষমতা ফিরে পায়।

মস্কোভা ডুবে যাওয়া রুশ বাহিনীর জন্য কতটা ক্ষতি?

পুরনো হলেও জাহাজ হারানো রুশ বাহিনীর জন্য বড় ক্ষতি। এটিকে কৃষ্ণ সাগরে রুশ বহরের প্রতীক এবং রাশিয়ার সামরিক গৌরব হিসেবে দেখা হতো। এটি যদি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফুটো হয়ে থাকে তাহলে সেটি হবে ১৯৪১ সালের পর রাশিয়ার হারানো সবচেয়ে বড় জাহাজ। ওই সময় জার্মান ডুবুরিরা বোমা দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধজাহাজ মারাত ডুবিয়ে দিয়েছিল। রয়টার্স অবলম্বনে।