পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ ইউক্রেনের

পূর্ব ইউক্রেনে তুমুল লড়াই চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের মধ্যে। ইউক্রেনীয় সেনাদের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে রুশ সেনারা। ডনবাস অঞ্চল ও ইজিয়ম শহরের চারপাশে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলায় অস্ত্র, বিমান, ড্রোন ও সেনা হারাচ্ছে রাশিয়া।

ডনবাস প্রসঙ্গে রবিবার ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ব্যর্থ হচ্ছে এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ সেনাদের অগ্রগতি অনেকটাই থেমে আছে। ইউক্রেন এই যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে, সংঘাতের শুরুর দিকে অনেক সামরিক বিশ্লেষক এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ন্যাটো মহাসচিব বলেন, মস্কো যেভাবে পরিকল্পনা করেছিল সেভাবে এগোচ্ছে না ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ব্যাপক পরিসরে সামরিক অভিযান করলেও প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ রাশিয়া। উল্টো প্রথম থেকেই ধারাবাহিক সফলতা এসেছে ইউক্রেনের ঘরে। রাজধানী কিয়েভ থেকে বাধ্য হয়ে আগেই সরে যেতে হয়েছে রুশ যোদ্ধাদের। এখন খারকিভ থেকেও পিছু হটেছে রাশিয়া।

মধ্য এপ্রিল থেকে ডনবাস দখলে মরিয়া হয়ে সামরিক শক্তির সর্বোচ্চটা চালাচ্ছে দেশটি। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল ডনবাস হিসেবে পরিচিত। এখানে রুশ আক্রমণের আগে থেকেই মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে অনেক ভূখণ্ড ছিল। অভিযানের শুরুর আগে (২১ ফেব্রুয়ারি) রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন পুতিন। এই ডনবাসকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চটা করছে মস্কো।

তাতে অবশ্য ইউক্রেনের যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় সামরিক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে অনেক সেনা হারাচ্ছে দেশটি। এ নিয়ে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনে মোতায়েন করা পদাতিক সেনাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে রাশিয়া। সেইসঙ্গে ডনবাসে লড়াইয়ে সুবিধা করতে পারছে না এবং সম্ভাব্য সময়সীমা থেকে অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে।

পূর্ব ইউক্রেনে যখন রুশ বাহিনী বিপর্যয়ের মুখে, তখন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস এম-৭৭৭ হাউইটজারও সরবরাহ করেছে, যার সুবিধা পেতে শুরু করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। পাঠানো হয়েছে আর্টিলারি। চলতি সপ্তাহে আরও সহায়তা পাঠানো হতে পারে। 

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশ নিয়ন্ত্রিত শহর ইজিয়মের চারপাশ ঘিরে লক্ষ্য লড়াই লক্ষ্য করা গেছে। রাশিয়া দাবি করছে, ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইউক্রেনের অবস্থানগুলোতে আঘাত হানছে তারা। তবে ইউক্রেনের জয়েন্ট ফোর্স টাস্ক বলছে, লড়াইয়ে রবিবার তাদের সেনারা ১৭টি রুশ হামলা প্রতিহত করেছে। ১১টি রাশিয়ান সামরিত সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার জানিয়েছেন, দুটি হেলিকপ্টার, দুটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করা গেছে।

এর মধ্যেও লুহানস্ক ও ডনেস্ক অঞ্চলের ফ্রন্টলাইনে রাশিয়া বেসামরিক স্থাপনায় প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে। ২৩টি গ্রাম ও শহরে গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স স্বাধীনভাবে ইউক্রেনের এমন দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়া বলছে, তারা কোনও বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করছে না।

ইউক্রেন যদি ইজিয়ম এবং পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহের পথে চাপ অব্যাহত রাখতে পারে, তাহলে মস্কোর পক্ষে ডনবাসের ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলা কঠিন হবে।ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও নিজেদের কিছু ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেছে, ডনবাসের কিছু জায়গায় রুশ বাহিনী তার অগ্রগতি ধরে রেখেছে।

সূত্র: রয়টার্স