যে ‘গেম চেঞ্জার’ অস্ত্র চায় ইউক্রেন, দিতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্রদের ওপর অত্যাধুনিক মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) পাঠানোর চাপ জোরদার করছে ইউক্রেন। যাতে তারা ডনবাসে রুশ আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। মার্কিন এম৭৭৭ হাউইটজারসহ পশ্চিমা কামান ব্যবস্থা এখন ইউক্রেনীয়রা রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এমন অস্ত্র আরও দেশটিতে পৌঁছার পথে রয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা বলছে, আরও লাগবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যেসব অস্ত্রের জন্য জোর গলায় দাবি তোলা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এমএলআরএস। এমন সময় তারা এই দাবি জানাচ্ছে, যখন ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণকে দূরপাল্লার কামানের লড়াই হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এক প্রতিবেদনে এমএলআরএস অস্ত্র চলমান যুদ্ধে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ইউক্রেনের এত চাপাচাপির পরও কেন যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্রগুলো দিতে রাজি হচ্ছে না।

এমএলআরএস কী?

এই রকেট লঞ্চারগুলো সামরিক যানে বসানো হয়, হাউইটজারের তুলনায় এগুলো বহন সহজ, রাশিয়ার কামান নিক্ষেপ থেকে ইউক্রেনের সেনারা নিজেদের রক্ষার সুযোগ পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের এমএলআরএস রয়েছে। একটি হলো এম২৭০, যা ১৯৮৩ সালে প্রথম উৎপাদন করা হয়। এটির রকেট ২০ থেকে ৪০ মাইলের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। অত্যাধুনিক রকেট সহকারে তা ১০০ মাইলের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

দ্বিতীয়টি হলো এম১৪২ হিমার্স, যা ১৯৯০ দশকে তৈরি হয়। এটি সাধারণ রকেটসহ ১৮৬ মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। বিশেষায়িত গোলা ব্যবহার করে ২১০ মাইল পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে নিপুণ এই অস্ত্রটি।

ইউক্রেনের কাছে এখন যেসব এম৭৭৭ হাউইটজার রয়েছে সেগুলো সর্বোচ্চ ২৫ মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।

 

ইউক্রেন কেন এসব অস্ত্র চায়?

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, দনেস্কতে রুশ হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা প্রস্তুত। এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুত। এজন্য আমাদের ন্যাটো স্টাইলের এমএলআরএস প্রয়োজনে। অবিলম্বে।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ার ওলেকসান্ডর মেরেজকো বলেন, রাশিয়া এখন কামান ব্যবহার করছে ব্যাপক ও নির্মমভাবে। এটি মোকাবিলায়, আমাদের সেনা ও বেসামরিকদের জীবন রক্ষার জন্য আমাদের প্রয়োজন এমএলআরএস।

ইউক্রেনের অস্ত্রভাণ্ডারে সোভিয়েত আমলের কয়েকটি এমএলআরএস রয়েছে। কিন্তু এগুলোর গোলা শুধু রাশিয়ায় উৎপাদন করা হয়। কিয়েভ বলছে, এই শূন্যতা পূরণে তাদের প্রয়োজন পশ্চিমা বিকল্প।

মার্কিন নির্মিত লঞ্চারগুলো পাওয়ার ফলে ইউক্রেনীয়রা আরও বেশি রুশ আর্টিলারি ব্যাটারিকে নিশানা বানাতে পারবে এবং দূর থেকে রুশ হামলা ঠেকানোর সুযোগ তাদের সামনে তৈরি হবে। দূর থেকে আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা অর্জনের ফলে রাশিয়ার সামরিক লজিস্টিকস কেন্দ্রও হুমকির মুখে পড়বে। যা মস্কোর আক্রমণের গতি কমিয়ে দিতে পারবে।

ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ও সাবেক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি রিঝেঙ্কো জানান, এসব অস্ত্র পেলে কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেন নিজেদের সমুদ্রবন্দরগুলোকে রুশ অবরোধ মুক্ত করতে পারবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়ায় মোতায়েন করা রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, আমাদের জন্য দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালাতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।

দনেস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বৃহস্পতিবার বলেছেন, আরও আর্টিলারি সমর্থন পেলে তা হবে একটি ‘গেম চেঞ্জার। তার কথায়, আমাদের প্রয়োজন লক্ষ্যবস্তুতে নিপুণ আঘাত, দূরবর্তী লক্ষ্যে আঘাতে সক্ষম কামান। অনেক বেশি বন্দুক ও শেল। 

 

যুক্তরাষ্ট্র কেন পাঠাচ্ছে না?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর বিষয়ে এখনও সবুজ সংকেত দেননি। গত সপ্তাহে অজ্ঞাত কর্মকর্তার বরাতে পলিটিকো জানিয়েছে, ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক, বেশি ধ্বংসাত্মক ও দূরপাল্লার মার্কিন এমএলআরএস ও হিমার্স সরবরাহ করাকে সংঘাতের উসকানি হিসেবে দেখতে পারে মস্কো।

বাইডেন ও ন্যাটো নেতারা বারবার জোর দিয়ে বলে আসছেন, ট্রান্সআটলান্টিক জোটটিকে মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত করা যাবে না।

ক্যাপিটল হিলে কিছু আইনপ্রণেতা তবু এমএলআরএস পাঠানোর পক্ষে কথা বলছেন। রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান বলেছেন, আমাদের প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তা পাঠানো আমাদের নিশ্চিত করবে। আমাদের কাছে এর উদাহরণ হলো এমএলআরএস পাঠানো, যা তারা চেয়ে আসছে।

এমন উদ্বেগ থাকলেও পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে ইউক্রেনকে। কিয়েভে এক ধরনের আশাবাদ রয়েছে, শেষ পর্যন্ত এমএলআরএসও পাঠাবে পশ্চিমারা।

মেরেজকো বলেন, বড় বিষয় হলো আমাদের কূটনীতিকরা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এর ফলে এগুলো পাওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি এমনটি ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই সামরিক সহযোগিতা পাঠানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়। অনেক দেশও এটিকে ভালো উদাহরণ ধরে অনুসরণ করতে পারে।

সূত্র: নিউজউইক