স্ন্যাক আইল্যান্ডে ইউক্রেনের ‘বড় জয়’ কী যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট?

কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। ইউক্রেনের টানা বোমা বর্ষণের পর দ্বীপটি থেকে পিছু হটে রুশরা। ইউক্রেনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, এই জয় বিভিন্ন দিক দিয়ে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এখবর জানিয়েছে।

রুশ যুদ্ধজাহাজের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের আহ্বান ইউক্রেনীয় সেনারা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যানের পর বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায় স্ন্যাক আইল্যান্ড।

পিছু হটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাশিয়া বলেছে, এটি তাদের সদিচ্ছার প্রতীক। যার মধ্য দিয়ে রাশিয়া প্রমাণ করছে যে, তারা ইউক্রেন থেকে মানবিক করিডোর দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে জাতিসংঘের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে না এবং বৈশ্বিক বিপর্যয়কর খাদ্য সংকট সৃষ্টি হোক তা চায় না।

স্যাটেলাইট ছবিতে স্ন্যাকস আইল্যান্ড

কিন্তু ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা ১২৭ দিন রুশ দখলে থাকার পর দ্বীপটি মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা এটিকে কৌশলগত ও প্রতীকী বিজয় হিসেবে দেখছেন।

ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোডনিউক নিউজউইককে বলেছেন, দ্বীপটিতে রাশিয়ার ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ সামগ্রী, রাডার সরঞ্জাম রয়েছে। যা ইউক্রেনীয় উপকূলীয় বাহিনীর কাছ থেকে রুশ যুদ্ধজাহাজকে লুকিয়ে ও সুরক্ষিত রাখছিল। এই জাহাজগুলো কৃষ্ণ সাগরে অবরোধে কাজে লাগানো যেত। একই সঙ্গে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণে এসব যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করার সুযোগ ছিল রাশিয়ার।

তিনি বলেন, এখন এমন কিছু ঘটবে না। ফলে যদি রাশিয়ার বড় কোনও যুদ্ধজাহাজ আমাদের তীরের কাছে আসে তাহলে আমরা সেটায় আঘাত করতে পারব। যেমনটি এপ্রিলে ইউক্রেনীয়রা রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবিয়ে দিয়েছে।

সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার জন্য দ্বীপটি পুনরায় দখল করা বিপজ্জনক হবে তা ইউক্রেনীয়রা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সাবেক প্রেস সচিব লিউলিয়া মেন্ডেল বলেন, রুশরা যে কোনও ব্যর্থতা স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছে এবং ভীত। এটি ইউক্রেনীয়দের জন্য বড় জয়। আমাদের সেনাবাহিনী দেখিয়ে দিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞের ফলে কী হয়। যেমনটি আমাদের কমান্ডার ইন চিফ ভালেরি জালুজনি বলেছেন এবং রুশদের দখলকৃত ভূখণ্ড মুক্ত করতে ইউক্রেনে নির্মিত হাউইটজার কাজে লাগানো হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ার ওলেক্সান্ডার মেরেজকো রাশিয়ার পিছু হটাকে তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রতীকী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে রুশ সেনারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এটিকে আমরা জয় হিসেবে দেখছি। বাস্তবে ইউক্রেনীয় সেনাদের বোমাবর্ষণের পর দ্বীপ থেকে রাশিয়া নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করেছে।

তিনি আরও বলেন, এটি রাশিয়ার জন্য নতুন চরনোবাইভকা হতে পারত।  

রাশিয়া সদিচ্ছার প্রকাশ হিসেবে দ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহারের যে দাবি করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মেরেজকো। তিনি বলেন, কিয়েভের কাছে পরাজিত হওয়ার পরও তারা একই ধরনের যুক্তির কথা বলেছে, তাদেরকে ওই সময় পিছু হটতে হয়েছিল।

স্ন্যাক আইল্যান্ডে দখল না থাকলেও কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার অবরোধ জারি থাকবে। যদিও তা আগের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক হবে। দ্বীপটির দক্ষিণে রুশ যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন সক্রিয় রয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরপরই ক্রিমিয়ার বন্দর সেভাস্তোপোল ত্যাগ করেছে রাশিয়ার পাঁচটি সাবমেরিন।

তবু স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের ফলে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য সমুদ্র পথে রফতানির আশা জাগছে। ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই ইউক্রেনীয় বন্দর ওডেসা দিয়ে শস্যের চালান নিরাপদে পার হতে পারবে।

মেরেজকো বলেন, এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একই সঙ্গে তারা পুরো সমস্যার সমাধান করছে না। কারণ রাশিয়ার অবরোধ এখনও অব্যাহত রয়েছে।