জাপোরিজ্জিয়াতে ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হামলার শঙ্কা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সতর্কতা

ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জিয়াতে একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ (সাজানো হামলার পর অপর পক্ষকে দায়ী করা) হামলা আসন্ন বলে সতর্ক করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) এই হামলা হতে পারে। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮০ দশকের শুরুতে নির্মাণ করে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের ডনিপ্রো নদীর তীরে অবস্থিত। ১ মার্চ থেকে কেন্দ্রটি রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্রটি দখলে নেয় রুশ বাহিনী।

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে প্রথম যেসব স্থাপনা দখল করে রাশিয়া, এটি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাশিয়ার দখলে থাকলেও কেন্দ্রটি পরিচালনা করছেন ইউক্রেনীয় কর্মীরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনারহোডার রণক্ষেত্রে কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান হওয়ার কারণে সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ সম্প্রতি শহরটিতে গোলাবর্ষণ বেড়েছে। কেন্দ্রটিতে গোলাবর্ষণের দায়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরকে দায়ী করে আসছে।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা ইঙ্গিত দিয়েছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ফলস ফ্ল্যাগ হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের সংস্কৃতি ও তথ্য নীতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি বৃহস্পতিবার টুইটারে বলেছে, ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন রাশিয়া জাপোরিজ্জিয়াতে উসকানির প্রস্তুতির নিচ্ছে। দখলদাররা ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রকৃত সন্ত্রাসী হামলার সাজানো নাটক করে পরিস্থিতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।  

আরেক টুইটে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোজাটমের সদস্যরা জাপোরিজ্জিয়া কেন্দ্র থেকে তড়িঘড়ি করে চলে গেছেন এবং কেন্দ্রটিতে অনির্ধারিত সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে।

টুইটে বলা হয়েছে, ১৯ আগস্ট শুধু জরুরি কর্মীরা জাপোরিজ্জিয়াতে থাকবেন। অপর কোনও কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

একই সময়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, শুক্রবার জাপোরিজ্জিয়াতে ফলস ফ্ল্যাগ হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কনাশেনকভ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সফরের মধ্যেই ১৯ আগস্ট জাপোরিজ্জিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফলস ফ্ল্যাগ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন। এই উসকানির পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎকেন্দ্র মানবসৃষ্ট বিপর্যয় সৃষ্টির অভিযোগ আনা হবে।

শুক্রবার ইউক্রেনীয় বন্দর নগরী ওডেসা সফর করেন গুতেরেস।

কনাশেনকভ দাবি করেছেন, শুক্রবার ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী নিকোপোল শহর থেকে কামান হামলা চালাতে চায়। এই হামলার পরিণতির দায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর চাপানো হবে।

নিউজউইকের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে উভয় দেশের দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেছে সাময়িকীটি।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলা করছে। কিয়েভের দাবি, রাশিয়া কেন্দ্রটিকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করছে এবং সেখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদের স্তুপ গড়ে তুলছে।

সিএনএন-এর যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের সঙ্গে যুক্ত একটি টারবাইন হলের ভেতরে রুশ সেনাবাহিনীর একটি যান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও প্রেস অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ইভান নেচায়েভ জাপোরিজ্জিয়াকে অস্ত্রমুক্ত করার ইউক্রেনীয় আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাপোরিজ্জিয়া সংলগ্ন এলাকাকে অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল ঘোষণার প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। এটি বাস্তবায়ন হলে কেন্দ্রটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।