ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার গণভোট কি বৈধ?

ইউক্রেনে রুশ সেনাদের দখলকৃত চারটি অঞ্চলের কয়েকটি অংশে শুক্রবার গণভোট শুরু হয়েছে। এই গণভোটের লক্ষ্য হলো অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করা। কিন্তু এই গণভোট কি বৈধ? মাকিন সাময়িকী নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে।

ইউক্রেন ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলে গণভোটকে অবৈধ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে। তবে রাশিয়ার ফেডারেশন কাউন্সিলের স্পিকার ভ্যালেন্টিনা মাতভিয়েঙ্কো শুক্রবার দাবি করেছেন, এই গণভোট বৈধ এবং আন্তর্জাতিক রীতি ও জাতিসংঘ চার্টারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

লুহানস্ক, ডনেস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ায় গণভোট হচ্ছে। ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ১৫ শতাংশ গণভোটের আওতায় রয়েছে। শুক্রবার শুরু হওয়া এই গণভোট চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ইউক্রেন আক্রমণের সাত মাস পর দখলকৃত ভূখণ্ডকে নিজেদের অংশ করে নিতে চাইছে রাশিয়া।

সাংবাদিকদের রুশ স্পিকার মাতভিয়েঙ্কো বলেন, আমি নিশ্চিত এমনভাবে এই গণভোট আয়োজিত হবে যাতে করে কেউ বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। আন্তর্জাতিক রীতি ও জাতিসংঘ চার্টার অনুসারে এই ভোট আয়োজিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ডনেস্ক, লুহানস্ক ও মুক্ত করা ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের এই বৈধ অধিকার রয়েছে। এখনকার পরিস্থিতিতে তা হলো বেঁচে থাকার অধিকার।

এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিযোগ করেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ডে ‘সাজানো’ গণভোটের আয়োজন করছে রাশিয়া। যা জাতিসংঘ চার্টার লঙ্ঘন করবে।

তিনি বলেছেন, কেউ শক্তি প্রয়োগ করে আরেকটি দেশের ভূখণ্ড দখল করতে পারে না। একমাত্র যে দেশ এমনটি করছে সেটি হলো রাশিয়া।

বাইডেন বলেছেন, স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি জাতিসংঘ চার্টার। রাশিয়া নিজেদের স্বার্থে গণভোট আয়োজন করে চার্টারকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বুধবার অঙ্গীকার করেছেন, ইউক্রেনে গণভোট আয়োজনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি দাবি করেছেন, এই গণভোট আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে দ্রুত।

লুহানস্ক ও ডনেস্ক অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে তারা কি রাশিয়ার অংশ হতে চান কিনা। খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলের ব্যালটে জিজ্ঞাস করা হবে ইউক্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র এবং রাশিয়ার অধীনস্ত হতে চায় কিনা।

এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে সেখানেও এমন গণভোট আয়োজন করে ভূখণ্ডটিকে নিজেদের অংশ করে নেয়। ওই সময় পশ্চিমারা গণভোটকে অবৈধ উল্লেখ করেছিল।

অফিস ফর ডেমোক্র্যাটিক ইন্সটিটিউশন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এই গণভোট পর্যবেক্ষণ করছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা এর কাতিয়া অ্যান্ডুজ বলছেন, এই গণভোটের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এমন প্রক্রিয়া আয়োজনে রাশিয়ার কোনও এখতিয়ার নেই।

তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় কোনও ভূখণ্ডে যেকোন নির্বাচন বা গণভোটের ঘোষণা ও আয়োজন করতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আর এর ভিত্তি হতে হবে ইউক্রেনের জাতীয় সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মান।