চীনের শান্তি প্রস্তাব: কূটনৈতিক ‘যুদ্ধে’ নামছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে ১২ দফার শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এমন প্রস্তাবে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। তবে অস্থায়ী বা শর্তসাপেক্ষে রাশিয়ার আহ্বানে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের শান্তি পরিকল্পনায় কিছু নেই জানিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন। সেখানে তার সহকারী কূটনীতিকদের স্মরণ করে দিয়ে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করতে যাচ্ছে, ঠিক এক বছর আগে এ নিয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করা হয়েছিল। তখন বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল মস্কো।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপন এবং রুশ সেনা প্রত্যাহারে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ৩২টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। রাশিয়াসহ আরও ছয়টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ওইদিনই ইউক্রেন ইস্যুতে ১২ দফার শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয় চীন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসেছে, নিরপেক্ষ রয়েছে এমন দেশগুলোকে নিয়ে কূটনৈতিক যুদ্ধে মেতেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এর মধ্যে শান্তি প্রস্তাবকে সমর্থন না করা, বিরত থাকা অথবা ইউক্রেন রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন করা। 

চীনের শান্তি প্রস্তাবে রাশিয়ার জন্য সুবিধা ছাড়া কিছুই নেই জানিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনও সতর্ক করে বলছেন, ইউক্রেনে অস্থায়ী যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব মেনে নিলে আরও অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত এবং রুশ বাহিনীকে পুনর্গঠনে কাজে লাগাবে মস্কো।

ব্লিংকেন যোগ করেন, বাস্তবতা হলো ভ্লাদিমির এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনিই এটি শেষ করতে পারেন।

যুদ্ধ অবসানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছে চীন তা প্রত্যাখ্যান করেছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো। জোটটির মহাসচিব বলেন, চীনের শান্তি আলোচনার আহ্বানের খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

এদিকে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা দিয়ে আগুনে জ্বালানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়ার মিত্র চীন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে চীনের উপ রাষ্ট্রদূত দাই বিং বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর নিষ্ঠুর ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। অস্ত্র পাঠানোর মধ্যে দিয়ে শান্তি আসতে পারে না, এই যুদ্ধ তার যথেষ্ট প্রমাণ । 

চীনের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেছেন, ‘ইউক্রেনের অস্ত্র দরকার, ঠিক যেমন আগুন নেভানোর জন্য একজন দমকলকর্মীর জলের প্রয়োজন হয়। রাশিয়া বাড়ি-ঘর ধ্বংস করছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। আগ্রাসন থেকে নিজেকে রক্ষা করে এমন একটি দেশকে সশস্ত্র করা একেবারেই বৈধ। এটি জাতিসংঘের সনদকে রক্ষা করারও একটি কাজ’।

রাশিয়া শুধু ইউরোপে নয়, বিশ্বজুড়ে শান্তি নষ্টের একটি শক্তি হিসেবে করেছে বলে অভিযোগ করেন কুলেবা। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে মস্কো। দেশটির অপরাধ ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছেছে। দেশটি শুধু দ্বন্দ্বকে উসকেই দেয় না, সেসব সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলোকে পরিকল্পিতভাবে বাধা দিয়ে আসছে’। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান