চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১৩ মে) সৌদি আরবে পৌঁছান তিনি। গাজা যুদ্ধ বা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নয়, বরং মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় অঙ্কের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করাই তার এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মূল উদ্দেশ্য। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
টেসলা সিইও এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্কসহ প্রভাবশালী মার্কিন ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনি প্রথমে রিয়াদে সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে অংশ নেবেন। এরপর বুধবার কাতার এবং বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। তবে তিনি ইসরায়েল সফর করছেন না।
ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেন, ‘যদিও জ্বালানি আমাদের সম্পর্কের মেরুদণ্ড, সৌদি আরবে বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক সুযোগ বহু গুণ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, "ফলে যখন সৌদি ও আমেরিকানরা একসঙ্গে কাজ করে, তখন ভালো কিছু ঘটে এবং বেশিরভাগ সময় অসাধারণ কিছু ঘটে।"
ফোরামের শুরুতে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দীর্ঘ ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে ভিডিওতে উড়ন্ত ঈগল ও বাজপাখি দেখানো হয়।
একটি রাজকীয় হলের সম্মুখ সারিতে বসে ছিলেন ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, ব্ল্যাকস্টোনের সিইও স্টিফেন এ. শোয়ার্টজম্যান, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান এবং খালিদ আল-ফালিহ।
দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মজবুত। কারণ সৌদি জ্বালানি সরবরাহ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দেয়।
ট্রাম্প বলেন, তিনি হয়তো বৃহস্পতিবার তুরস্কে যাবেন, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি আলোচনা হতে পারে।
রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার পর এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এমন এক সময়ে তিনি এই সফর করছেন যখন বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে।
ট্রাম্পের এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একসঙ্গে একাধিক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে জানুয়ারিতে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে আগামী চার বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাবি করবেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে সফর করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
রয়টার্সকে সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প সৌদি আরবকে ১০০ বিলিয়নের বেশি মূল্যের একটি অস্ত্র প্যাকেজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্পের কাতার ও ইউএই সফরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বেও মূলত অর্থনৈতিক বিষয়েই আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাতারের রাজপরিবার ট্রাম্পকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ উপহার দিতে পারে। যেটি এয়ার ফোর্স ওয়ান বা প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য সাজানো হবে। বিষয়টি অবশ্য ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
ট্রাম্প এই বিমানটি তার প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির জন্য দান করবেন বলে জানা গেছে, যা তিনি দায়িত্ব শেষে ব্যবহার করবেন।