দেশ পরিচিতি: চেক প্রজাতন্ত্র

চেক প্রজাতন্ত্র বা চেকিয়া নামক দেশটির সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। এছাড়া উন্নত অর্থনীতির ভূমিবেষ্টিত দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বেশ সমৃদ্ধ। ১৯৯৩ সালের ‘ভেলভেট ডিভোর্স’-এর মাধ্যমে দেশটির জন্ম।

১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে হয় ‘ভেলভেট ডিভোর্স’। এর মাধ্যমে চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র চেক প্রজাতন্ত্রের।

প্রায় ৪০ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের পরে ১৯৯০ সালে উত্থান হয় দেশটির। ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা অর্জন করে দেশটি। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে চেক প্রজাতন্ত্র।

সোভিয়েত-সমর্থিত একটি অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উৎখাত করে ১৯৪৮ সালে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয় দেশটিতে। ১৯৬৮ সালের ‘প্রাগ বসন্ত’-এর মাধ্যমে কমিউনিস্ট নেতা আলেক্সান্ডার ডুবসেক উদারনৈতিক সংস্কার আনতে চাইলে ‘ওয়ারশ চুক্তি’র কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

১৯৮৯ সালে ক্রেমলিনে সমাজতন্ত্রের পতন হতে শুরু করে। তখনই চেকোস্লোভাকিয়ার ‘ভেলভেট বিপ্লব’ এর রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হন ভিন্নমতপন্থি নাট্যকার ভ্যাক্লাভ হ্যাভেল। বিপ্লবটির মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসানের পর ভ্যাক্লাভ হাভেল চেকোস্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • নাম: চেক রিপাবলিকা
  • রাজধানী: প্রাগ
  • আয়তন: ৭৮ হাজার ৮৭১ বর্গ কিলোমিটার
  • জনসংখ্যা: ১ কোটি ৫ লাখ
  • ভাষা: চেক
  • গড় আয়ু: পুরুষদের ৭৪ বছর ও নারীদের ৮০ বছর

 

নেতৃত্ব

পিটার পাভেল। ছবি: রয়টার্স

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পিটার পাভেল

২০২৩ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী আন্দ্রেজ বাবিসকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। মার্চে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিলোস জেমানের মেয়াদ শেষ হলে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সাবেক এই ন্যাটো জেনারেল।

দেশটিতে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা মূলত আনুষ্ঠানিক হলেও পদটি বেশ প্রভাবশালী। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নির্বাচনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যাস্ত থাকে। দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রেসিডেন্টের ভূমিকা রয়েছে।

পিটার ফিয়ালা। ছবি: রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা

২০২১ সালে মধ্য-ডানপন্থী ঘরানার স্পোলু জোট থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। পপুলিস্ট এএনও পার্টি চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে পরাজিত হয়। প্রেসিডেন্ট জেমানের স্বাস্থ্যজনিত কারণে নভেম্বর পর্যন্ত নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।

এএনও নেতা আন্দ্রেজ বাবিজের শাসনামলে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কারণে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে অবস্থান হারায় দেশটি। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগও সমালোচনায় পড়ে।

ছবি: রয়টার্স

সংবাদমাধ্যম

দেশটির সরকারি ও বেসরকারি রেডিও ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর মধ্যে সর্বদা প্রতিযোগিতা বজায় থাকে। একটি ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলসহ সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘চেসকা টেলিভিজ’ আরও বেশ কয়েকটি চ্যানেল পরিচালনা করে।

দেশটির সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকারী সংগঠনগুলো মিডিয়ার মালিকানা কেন্দ্রীভূত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

 

দেশটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১৯১৮: চেকোস্লোভাকিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। টমাস মাসারিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৩৫: টমাস মাসারিকের পরে প্রেসিডেন্ট হন এডভার্ড বেনেস।

১৯৩৯: নাৎসি বাহিনী চেক ভূখণ্ডে দখলদারিত্ব চালায় এবং চেকোস্লোভাকিয়াতে জার্মান শাসন কায়েম হয়। ফ্যাসিস্ট নেতা জোসেফ টিসোর নেতৃত্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে স্লোভাকিয়া।  

১৯৪০: লন্ডনে নির্বাসিত সরকার গঠম করেন বেনেস।

সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা ইউরোপীয় রাজধানীর একটি হলো প্রাগ। ছবি: রয়টার্স

১৯৪৫: প্রাগ শহরে সোভিয়েত সেনা প্রবেশ করে। দেশে ফিরে প্রায় ২৫ লাখ সুডেটেন জার্মান ও ৫ লাখেরও বেশি হাঙ্গেরি জতিগোষ্ঠীকে বহিষ্কারের ডিক্রি জারি করেন বেনেস।

১৯৪৬: চেকোস্লোভাক কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ক্লেমেন্ট গট্যল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৯৬৮: সোভিয়েত সেনারা দখলদারিত্ব শুরু করলে আলেক্সান্ডার ডুবসেকের নেতৃত্বে ‘প্রাগ বসন্ত’ আন্দোলন হয়।

১৯৬৯: ডুবসেককে প্রতিস্থাপন করে কমিউনিস্ট দলের নেতা গুস্তাভ হুসাক।

১৯৭৫: গুস্তাভ হুসাক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৭৭: নাট্যকার ভ্যাক্লাভ হ্যাভেলসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের একটি দল নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে চার্টার ৭৭ প্রকাশ করে।

১৯৮৯: কট্টরপন্থি কমিউনিস্ট পার্টির পতনের দাবিতে প্রাগ শহরের রাস্তায় গণআন্দোলন করে জনগণ। এ আন্দোলনকেই ‘ভেলভেট বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সাংবিধানিকভাবে কমিউনিস্ট দলের ক্ষমতা ধরে রাখার নিয়ম বাতিল করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ভ্যাক্লেভ হাভেল।

১৯৯০: চেক ও স্লোভাক ফেডারেটিভ রিপাবলিক নামকরণ করা হয় দেশটির। ১৯৪৬ এর পর প্রথম অবাধ নির্বাচন হয়।

১৯৯১: দেশটি থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৯৩: ভেলভেট ডিভোর্সের মাধ্যমে চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে যায় এবং চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

১৯৯৬: স্বাধীনতার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ভ্যাক্লেভ কাউলুস।

১৯৯৮: পাঁচ বছর মেয়াদে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ভ্যাক্লাভ হাভেল।

১৯৯৯: ন্যাটো জোটের সদস্য হয় চেক প্রজাতন্ত্র।

২০০৪: ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে দেশটি।

২০১৬: ‘চেকিয়া’ হিসেবে চেক প্রজাতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত নামকরণে সম্মত হয় দেশটির সরকার।