ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো মিত্রদের নিরাপত্তা আশ্বাসে কী আছে?

যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বৈশ্বিক মিত্ররা ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা আশ্বাস উন্মোচন করেছে। দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার লক্ষ্যে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমন সময় এই ঘোষণা দেওয়া হলো যখন কিয়েভ ন্যাটো জোটের সদস্য হতে উন্মুখ হয়ে আছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ বা সময়সীমা নির্ধারণ না করার কারণে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সমালোচনা করার এক দিন পর বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক জোটের পক্ষ থেকে এই আশ্বাস ঘোষণা করা হয়েছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণের পর লড়াইরত ইউক্রেন দ্রুততম সময়ে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ন্যাটোতে দেশটিকে অন্তর্ভুক্ত করার বদলে বিশ্বের শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭ দেশগুলো একটি দ্বিপক্ষীয় কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আওতায় ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং আবার রাশিয়া আক্রমণ করলে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

জেলেনস্কি ও জি-৭ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ভবিষ্যতেও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এটি ইউক্রেনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী বার্তা। যত দিন প্রয়োজন আমরা ইউক্রেনের পাশে থাকব।

জি-৭ জোটের দেশগুলো হলো, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি ও ব্রিটেন।

ন্যাটোতে যোগদানের সময়সীমা ঘোষণা না করায় হতাশ জেলেনস্কি এই ঘোষণাকে অর্থপূর্ণ সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে মিত্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে একাধিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর পথে আজ ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরবে।

অবশ্য জেলেনস্কি আরও বেশি নিরাপত্তা সহযোগিতার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছেন। বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা বলতে পারি সম্মেলনের ফলাফল ভালো। কিন্তু যদি ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হতো তাহলে আদর্শ বিবেচনা যেত।

জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রয়োজনীয় পূরণে সম্ভাব্য সবকিছু করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি স্বীকার করেছেন, অস্ত্র সরবরাহের জেলেনস্কির হতাশার কথা। বাইডেন বলেন, আপনার (জেলেনস্কি) মানিয়ে নেওয়া এবং দৃঢ়তা পুরো বিশ্বের জন্য একটি মডেল। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছি যেদিন আমরা আপনাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগদান উদযাপন করব।

বাইডেন কৌতুকের ছলে বলেন, ‘আপনার জন্য খারাপ হলো আমরা কোথাও যাচ্ছি না। আপনি আমাদের সঙ্গে বাঁধা পড়েছেন।’ তার এমন কথায় হেসে উঠেন জেলেনস্কি।

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি বহুপাক্ষিক বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করে আসছে। এতে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম, যেমন- যুদ্ধবিমান, প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও সাইবার প্রতিরক্ষা সরবরাহের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এসবের বিপরীতে ইউক্রেনকে বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিসহ শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেবে।