নওয়াজের ক্ষমতাচ্যুতি: মুখ থুবড়ে পড়তে পারে ভারত-পাকিস্তান সংলাপ

আদালতের রায়ে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সংলাপ প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও অস্থিতিশীলতায় পড়তে পারে। ভারতের সাবেক কয়েকজন কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা এমন ধারণা পোষণ করছেন। তাদের মতে, পাকিস্তানের সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার বিষয়ে ভারতের প্রস্তুতি থাকা উচিত।

Modi--621x414

কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, নওয়াজের পদত্যাগ ভারত-পাকিস্তানের আলোচনার জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ হলেও নওয়াজ শান্তির পক্ষে ছিলেন। অবশ্য ভারতীয় বিশ্লেষকরা এমনও বলছেন যে, নওয়াজ পদত্যাগ করলেও ভারতীয় নাগরিক কুলভুষণ যাদবের মামলা বা কাশ্মির ইস্যুতে কোনও পরিবর্তন হবে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বিষয়ক সাবেক বিশেষ দূত সাতিন্দার কে. লাম্বাহ বলেন, ১৯৪৭ সালের পর থেকে নওয়াজ শরিফই ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বৈঠক করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রায় ১৫-২০ বৈঠকের বেশিরভাগ তৃতীয় কোনও দেশে হয়েছে। নওয়াজ ভারতে খুববেশি সফর করেননি তা আলাদা বিষয়। কিন্তু তিনি ১৯৯১ সালে রাজিব গান্ধীর অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হয়েছিলেন। পরে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানেও হাজির হন। নওয়াজের পদত্যাগে ভারতের প্রধান উদ্বেগ পাকিস্তানের সঙ্গে সংলাপের একজন অংশীদার হারালো।

সাবেক এই দূত আগামী কয়েক মাস পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

পাকিস্তানে হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কূটনীতিক টিসিএ রাঘবন বলেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য এটি অনেক পিছিয়ে পড়ার মতো ঘটনা। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ করতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক। নওয়াজের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তা আরও স্পষ্ট হলো।

ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক কাশ্মির ইস্যুতে আটকে আছে। নয়া দিল্লির দাবি, ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তান বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিদের সহায়তা দিচ্ছে। পাকিস্তানের পাল্টা অভিযোগ, ভারত বালুচিস্তানে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

লাম্বাহ বলেন, ‘এই মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ খুব কম রয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতের বড় ধরনের কোনও প্রভাব পড়বে না।’

২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন নতুন দেশটি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী পাবে।

কৌশলগত বিষয়ক বিশ্লেষক উদয় ভাস্কর বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অনেক কিছুই নির্ভর করবে কিভাবে খণ্ডকালীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ইসলামাবাদের ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।’

উদয় উল্লেখ করেন, নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক জীবন সামরিক শক্তির সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পছন্দের মানুষ ছিলেন নওয়াজ। কিন্তু ১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশাররফ যুগের শুরুতে সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হয় তাকে।’ সূত্র: দ্য হিন্দু।

/এএ/