উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে: এনডিটিভি

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মিয়ানামারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভারতে প্রবেশের ঘটনা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার আসামের গুয়াহাটি ছেড়ে আসা একটি বাস থেকে ১৮ রোহিঙ্গাকে আটকের কথা জানিয়ে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি এই খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দেওয়া পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফাইল ছবি

এনডিটির খবরে বলা হয়েছে, দিল্লি যেতে চাওয়া এসব রোহিঙ্গাকে খোয়াই জেলার তেলিয়ামুরা থেকে আটক করে ত্রিপুরা পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে ১১ পুরুষ, তিন নারী ও চার শিশু রয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করত। অন্য অনেক রোহিঙ্গাদের মতো তারাও ত্রিপুরার সিপাহিজালা জেলার সোনামুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।

গত বছরের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। একই সময়ে ভারতে আগে থেকেই বসবাস রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করবার উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রোহিঙ্গাসহ বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বের করে দিতে সব রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংসদে জানান। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আপাতত আটকে আছে ওই প্রক্রিয়া।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে জানান, এসব রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। মানবপাচারকারীরা ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভারতসহ অন্য দেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে এনডিটিভি।

ত্রিপুরায় রোহিঙ্গা আটকের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত ১৪ জানুয়ারি উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর লে স্টেশন থেকে ৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। গত বছরের ২৯ নভেম্বর পশ্চিম ত্রিপুরার খয়েরপুর মার্কেট এলাকা থেকে আরও ৮ রোহিঙ্গাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সমন্বয়ে একটি যৌথ দল গঠন করেছে ভারত। জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ইবোমচা সিংহ এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গারা তাদের দেশ ছেড়ে পালানোর চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে। সিআইডি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, আটককৃত তিন রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে এজেন্টরা যোগাযোগ করে। প্রথমে তাদের মালয়েশিয়ায় কাজের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তিন দিন তারা সেখানে ছিল। পরিবারসহ মালয়েশিয়া যেতে এজেন্টকে তারা প্রায় ২২ লাখ কিয়াট (মিয়ানমারের মুদ্রা) দেয়। বাংলাদেশ থেকে তারা সোনামুরা সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করে। আগরতলায় তারা একদিন অবস্থান করে গুয়াহাটি ও দিমাপুর হয়ে ইমফলে পৌঁছায়।

সূত্রটি এনডিটিভিকে জানায়, ইমফল থেকে তাদের মুসলিম মনিপুরি উপজাতি অধ্যুষিত লিলংয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে তারা পাঁচদিন ছিল। পরে সেখান থেকে তাদের সীমান্ত শহর মোরিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের তিনদিনেরও বেশি সময় রাখা হয়।