সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কাশ্মিরি মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার

কাশ্মিরের প্রখ্যাত এক মানবাধিকার কর্মীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার করেছে ভারতের কাউন্টার টেরোরিজম সংস্থা। এই আইনে জামিন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মানবাধিকার কর্মী খুররাম পারভেজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভারত শাসিত কাশ্মিরে খুররাম পারভেজের বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালানোর পর তাকে আটক করে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্যের সুযোগ পাননি পারভেজ। তবে এই গ্রেফতারের ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে নিন্দা শুরু হয়েছে, দাবি করা হচ্ছে তার মুক্তি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট এবং অন্যরা বলেছেন এই গ্রেফতার হলো মানবাধিকার কর্মীদের নীরব করে দেওয়া এবং শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা।

খুররাম পারভেজ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের কঠোর সমালোচক। তিনি কাশ্মিরভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ জম্মু কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি (জেকেসিসিএস) পরিচালনা করে থাকেন। এই গ্রুপটি কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার হরণ এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এছাড়াও খুররাম পারভেজ এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনিস্ট ইনভলিন্টিয়ারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (আফাদ) এর চেয়ারপার্সন। আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার গ্রুপটি কাশ্মিরসহ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে গুমের ঘটনার ওপর নজর রাখে।

২০১৬ সালেও একবার খুররাম পারভেজকে গ্রেফতার করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডে যেতে বাধা দেওয়ার এক দিন পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তাকে বিতর্কিত জননিরাপত্তা আইনে (পিএসএ) আইনে গ্রেফতার করা হয়। এই আইনে বিনা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত আটক রাখা যায়। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর চাপে ৭৬ দিন পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সোমবার এনআইএ তদন্তকারীরা কাশ্মিরের মূল শহর শ্রীনগরে জেকেসিসিএস এর কার্যালয় এবং খুররাম পারভেজের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত ম্যারি লেলোর বলেছেন, পারভেজের গ্রেফতারের খবরে তিনি বিরক্ত। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘তিনি সন্ত্রাসী নন, একজন মানবাধিকার কর্মী।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে উপত্যকাটিতে বাড়ছে ক্ষোভ। পুলিশ বলছে, শ্রীনগরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় ক্রসফায়ারে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি নিরাপত্তা বাহিনী ওই দুই বেসামরিককে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।