রাষ্ট্রপতি পদে যশবন্তকে সমর্থন সিপিএমের, ক্ষুব্ধ কর্মীরা

ভারতের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত সম্মিলিত বিরোধী জোট প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে সর্মথন দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিপাকে সিপিএম। বিরোধী প্রার্থী হিসেবে যশবন্তকে সমর্থন করার জন্য সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যে হুইপ জারি করেছেন, তাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে সোশাল মিডিয়া সরব হয়েছেন দলীয় কর্মীরা। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের প্রস্তাবিত প্রার্থীকে কেন সমর্থন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের অন্দরে। এমনটাই সূত্রের খবর।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতাদের টার্গেট করে সোশাল মিডিয়ায় বামপন্থীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘মানুষের সঙ্গে সিপিএম’ পেজে যশবন্তকে সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়িত ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ব্যাপকভাবে সীতারাম ইয়েচুরির ছবি দিয়ে ট্রোল করছেন বামপন্থীদের একটা বড় অংশ। এই পেজে আর্য্য গুহ বলেছেন, ‘যত বোঝাতে আসুন, থিওরি নামান, বাংলার সাধারণ, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা মেনে নেবে না।’

গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সিপিএমের ভোট ব্যাংকে এমনিতে ধ্বস নেমেছে। মীনাক্ষী, ঐশিদের আন্দোলনের ফলে কিছুটা রক্ত ক্ষরণ আটকানো গেলেও, যশবন্তকে সমর্থন দেওয়ার পরে, সিপিএমের আর অস্তিত্ব থাকবে বলে আমার মনে হয় না।’

তানিয়া বসু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সব কর্মীরাই পরমাণু চুক্তির জন্য প্রথম ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তোলা বুঝলো না, আবার কেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সেটাও বুঝলো না। আর এখন আরএসএসপন্থী যশবন্তকে কেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থন করা হচ্ছে সেটাও কর্মীরা বুঝলো না, শুধু দিল্লির নেতারা বুঝলো, তাই তো?’

শবনম তালুকদার কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘এদের মাথায় হাজার লাথ খেলেও ঢুকবে না যে কেবল তত্ত্বের কচকচনি দিলে সাধারণ মানুষকে কোনোদিনই আর পাশে পাবে না। অন্তত সংসদ, বিধানসভায় তো নয়ই।’

আশিফ ইকবাল নামে এক সিপিএম সদস্য সাফ বলেছেন, ‘কোনও মতেই মানা সম্ভব না। দরকার হলে পার্টি থেকে সরে যাব। কিন্তু একদম ভুল পথে এগিয়ে যেতে পারব না।’

কৌশিক চট্টেপাধ্যায় সরাসরি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ‘আরএসএসের প্রোডাক্ট এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে দেওয়া, সংযুক্ত বিরোধী দলগুলোর পক্ষে কতটুকু যুক্তিযুক্ত? তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। অন্যান্য দলের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চুড়ান্ত বিরোধী হিসেবে পরিচিত বাম এবং আরজেডির মতো দলগুলো যশবন্ত সিনহার পক্ষে ভোট দেবেন! এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। মোটেও কল্পনা করতে পারি না। যে বিরোধী দলগুলো সম্মিলিতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবাপন্ন এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন প্রার্থী জোগাড় করতে পারে না, তারা বিজেপির মতো দল আর আরএসএসের মতো পোক্ত সংগঠনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে বড়সড়ো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে! এটা অন্তত বিশ্বাস করতে পারলাম না।’

খোদ সীতারা ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করেছেন সমরজিৎ দাস। তিনি বলেছেন, ‘কমরেড একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর চাইছি। আশা করি দেবেন। কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনাদের মনে হলো তৃণমূল একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল? তাহলে বলছেন, তৃণমূল আপনাদের শত্রু নয়। তাহলে বাংলায় লড়াইয়ের নামে ধ্যাষ্টামো বন্ধ করুন। আশা রাখি উত্তর দেবেন।’

বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির এক নেতা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন আছে যখন কর্মী-সমর্থকদের তা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পলিটব্যুরোর এই চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত অনেকেই মানতে পারছেন না। দলীয় শৃঙ্খলার কারণে তারা প্রকাশ্যে সরব হচ্ছেন না। কিন্তু কর্মী-সমর্থকদের তো আর চাপিয়ে রাখা যাবে না। তাই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। অনেকেই বলছেন, বামেরা পালটা প্রার্থী দিতে পারত। কারণ বিরোধী প্রার্থী সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে এমনিতেই হারবেন। বামেদের প্রার্থীও জিততে পারত না, এটা ঠিক। কিন্তু এভাবে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতো না। আর কর্মী-সমর্থকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় থাকত।’