জঙ্গল থেকে হঠাৎই মধ্যপ্রদেশের লোকালয়ে ঢুকে পড়ে একটি বাঘ। এক পর্যায়ে হামলে পড়ে দেড় বছরের একটি শিশুর ওপর। তাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিশুটির মা অর্চনা চৌধুরী তখন সন্তানকে বাঁচাতে খালি হাতেই বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়েন।
অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কয়েক মিনিট ধরে তাই বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান। স্পষ্টতই অসম লড়াই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঘের থাবা থেকে নিজের শিশু সন্তানকে বাঁচাতে সমর্থ হন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সন্তানকে বাঁচাতে ওই নারী যখন বাঘের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তার কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে। আহত মা ও তার শিশু সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত রবিবার মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় টাইগার রিজার্ভ সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় অর্চনা এবং তার শিশু সন্তান সেখানকার একটি মাঠে অবস্থান করছিলেন।
ভারতে অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। বন্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকাগুলোর কাছে বসবাসকারী মানুষের ওপর জীবজন্তুর হামলা নতুন নয়। গ্রামবাসীরা বলেন, শুধু বাঘই নয়, হাতিও তাদের গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করে নিয়মিত।
রবিবারের ঘটনায় বাঘটি ওই শিশুর মাথার মধ্যে দাঁত বসিয়ে শিশুটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। শিশুটিকে বাঁচাতে তার মা তখন বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। তার চিৎকারে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা লাঠি নিয়ে ছুটে আসেন এবং বাঘটিকে শেষ পর্যন্ত তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন।
ওই মায়ের ফুসফুসে বাতাস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। তার শরীরে গভীর ক্ষত রয়েছে। শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়েছে।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির আঘাত তত গুরুতর নয়, তবে মা গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। জব্বলপুর শহরের সিভিল সার্জন মিষ্টি রুহেলা জানিয়েছেন, মা ও শিশু উভয়েই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ভারতজুড়ে যেসব মানুষ বনাঞ্চলের কাছাকাছি থাকেন, তারা ক্রমাগত বন্যপ্রাণীর সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রুত নগরায়ণের কারণে বন্যপশুর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই বন্য শিকার ও আশ্রয়ের খোঁজে জঙ্গল-লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম, এমনকি কখনও কখনও গ্রাম-লাগোয়া শহরেও হানা দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
রবিবারের ঘটনা গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ভারতের বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাঘটিকে খুঁজে বের করে আটক করা। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, কোনও বাঘ যেন সংরক্ষিত এলাকা থেকে না পালাতে পারে, সেটি নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সূত্র: জি নিউজ।