মমতার সরকার স্বৈরাচারী, তোপ বামেদের

রাজ্য সরকার স্বৈরাচারী, মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে– সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানে এমনই অভিযোগ করলেন বামনেতারা। ‘চোর ধরো, জেলে ভরো’ স্লোগান তুলে শুক্রবার পথে নামে রাজ্য বামফ্রন্ট। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গোরুপাচার, কয়লাপাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাদের তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবিতে তোলেন তারা। পাশাপাশি এসব কাণ্ডে যারা-যারা এখনও অধরা তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান বামেরা। অনেকদিন পরে বামদের পুরানো মেজাজে পাওয়া গেলো। 

যদিও সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই রাস্তায় নামেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরা। বামফ্রন্টের এই বিক্ষোভ ঘিরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হয় সিজিও কমপ্লেক্স চত্বর। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাস, শমীক লাহিড়ী, গার্গী চ্যাটার্জীসহ অপর নেতারা। মিছিলে ছাত্র-যুব সংগঠন, সিপিএম ও বামফ্রন্টের একাধিক সংগঠন অংশ নেয়।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ উলঙ্গ হয়ে গেছে। ক্লাস টেনের দুজন ছাত্র অপহরণ হলো। কোন এমএলএ, কোন এমপি বলেছে পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। বসিরহাটে লাশ পাওয়া গেলো। সিএম ঢং করে দেখান ভিডিও আইসির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আসলে শুধু অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ। যতক্ষণ না ১৬ আানা উদ্ধার হচ্ছে ছাড়ব না। দশ বছর তৃণমূলের চোর-জোচ্চোরতন্ত্র সব জায়গায দূষিত করেছে। দুর্নীতি করতে দুর্নীতিবাজ লাগে। যারা ওই খুন করেছে। কোনোটাতেই বিজেপি তৃণমূলের চাইতে কম না, তৃণমূল বিজেপির চাইতে কম না। আমরা এক চোখা নই, আমরা একরোখা। আমরা বলেছিলাম আসব। পুলিশের কত লাঠি-জলকামান আছে। আমরা অভিযান করব। চাকরি প্রার্থীরা যখন এখানে এসেছে এই দালাল পুলিশরা লাঠি চালিয়েছে। তাই পুলিশকে বলেছি চোর ধরো জেলে ভরো। তৃণমূলের নেতারাই মমতার কথা শুনছে না। আপনারা কেন শুনছেন? পুলিশ ডাহা ফেল। মাস্টারমশাইরা ভালো করে না পড়ালে আলাদা টিউশন দিতে হয়। তেমনি পুলিশ থাকতে ইডি-সিবিআই এসেছে। এই এজেন্সি বিজেপি পাঠায়নি। আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। তবে আমরা বলেছি, গতি বাড়াও। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলেই কেউ সাধু হয় না।’

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘সভা বানচাল করার জন্য পুলিশের লোকেরা এসে অত্যাচার করেছে। এই সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় চলতে চাইছে। একে রুখতেই হবে। গণতন্ত্রকে হত্যা করতে আমরা দেব না। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তা অভাবনীয়। সেদিকে নজর দিন। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে প্রতিটি এলাকায় প্রতিবাদে মুখর হতে হবে। মানুষের বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চাকরির অধিকারকে আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।’

সুজন চক্রবর্তী বলেন,‘অপরাধীদের বাইরে থাকার কোনও সুযোগ নেই। এবার ঠিকমতো জেলে ভরে রাখুন। অনুব্রত মণ্ডলের দারুণ সুবিধা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে বাড়তি বিপদে না পড়েন সেজন্য তোষামোদ করে যাচ্ছেন অনুব্রতকে। নাহলে তো ধরা পড়ে যাবে। সিবিআই-ইডি আমাকে ধরলে তো আমি খুশি হব। কমিউনিস্টরা অন্য ধাতুতে গড়া। আমাকে ধরলে ঠেলা বুঝবে।’

এদিন সূর্যকান্ত মিশ্র কটাক্ষ করে বলেন, ‘কজন জেলে যাবে, কজন বাইরে থাকবে বলতে পারছি না। আগে জানতাম শিক্ষামন্ত্রীর এমন অধঃপতন হয়েছে। কিন্তু কালিঘাট বাদ দিয়ে হবে না। এখানে ধরা পড়লে বিজেপিতে চলে যাচ্ছে। আবার আসছে। আমাদের দাবি, লুঠের টাকা উদ্ধার করতে হবে। লড়াইটা লড়তে হবে। বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করব। আর এখানে তো পার্থক্য করা যায় না। তৃণমূলে সবাই চোর নয়। নেতারা চোর। সাধারণ যারা তাদের বলবেন না তারাই একদিন সঙ্গে থাকবে।’

সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে রাজ্যে নিজেদের পুরনো অবস্থানে ফিরাতে মরিয়া বামেরা। দুর্নীতির ইস্যুতে প্রতিদিনই জেলায় আন্দোলনের ঝড় তুলছেন বিজেপির সুকান্ত-শুভেন্দুরা। এই ইস্যুতে ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিজেপি থেকে পিছিয়ে পড়ছে বামেরা। এবার সেই ঘাটতি পূরণ করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামার চেষ্টা করছে আলিমুদ্দিন। এদিনের বিক্ষোভ সেই লক্ষ্য খানিকটা হলেও অক্সিজেন দিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।