আসামে আগত বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের মামলা সুপ্রিম কোর্টে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে যে ঐতিহাসিক আসাম চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে আগতরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সেই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে আনা বেশ কয়েকটি মামলা একত্রিত করে সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানি শুরু হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ এ মামলার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঠিক কোন কোন বিষয়গুলোতে তারা রায় প্রত্যাশা করছেন, সেগুলো নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনার মাধ্যমে স্থির করতে।

এই বিতর্কের মূলে আছে ১৯৮৫ সালের আগস্টে স্বাক্ষরিত আসাম অ্যাকর্ড বা আসাম চুক্তি – যা রক্তক্ষয়ী আসাম আন্দোলনের শেষে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু), আসাম রাজ্য সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছে, যারা বাংলাদেশ থেকে ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের ভেতর আসামে এসেছে, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হবেন।

আসাম চুক্তির এই ধারাটি ভারতের নাগরিকত্ব আইনে সংযুক্ত করা হয় একটি বিশেষ সংশোধনী এনে। আর সেটিই হলো ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সেকশন ৬এ, যাতে বলা হয়েছে, ওই সময়সীমার ভেতরে আসামে আসা বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পাবেন – তবে আইনের ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিজেদের নাম তাদের নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত করতে হবে।

ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করে আসামের বহু সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক মামলা করেছে, যার মধ্যে কোনও কোনওটি দশ-বারো বছরেরও বেশি পুরনো। এরকম মোট সতেরোটি মামলা এতদিন দেশের শীর্ষ আদালতে ঝুলে ছিল, কিন্তু অবশেষে সেগুলোকে একত্রিত করে সাংবিধানিক বেঞ্চে তার শুনানি মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হচ্ছে আসাম চুক্তি। আগস্ট, ১৯৮৫

মামলাকারীদের অন্যতম হলো ‘আসাম সম্মিলিত মহাসঙ্ঘ’ নামে গুয়াহাটির একটি সিভিল সোসাইটি গ্রুপ, যারা তাদের পিটিশনটি দাখিল করেছিল ২০১২ সালে।  

ওই সংগঠনটি বলছে, ভারতের নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারাটি বৈষম্যমূলক। কারণ কাগজপত্র ছাড়া যে অভিবাসীরা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছেন এবং যারা আসাম ছাড়া বাকি ভারতে এসেছেন – তাদের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়ার ‘কাট-অফ ডেট’ নিয়ে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। এক এক দল অভিবাসীর জন্য দেশের এক এক প্রান্তে এক এক রকম বৈধতার তারিখ গ্রহণযোগ্য নয় বলেই তারা যুক্তি দিচ্ছেন।  

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও (ভারতের সাবেক আইনমন্ত্রী) কপিল সিব্বাল আজ শীর্ষ আদালতকে জানান, মামলাকারীরা নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনা করবেন এবং তারপর কোর্টকে জানাবেন তারা ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো নিয়ে শুনানি চাইছেন।  

এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জী) বিতর্ক এবং আসামের ‘বিদেশি খেদাও’ আন্দোলনের জেরে যারা পঞ্চাশ, ষাট বা সত্তর বছর আগেও বাংলাদেশ থেকে ওই রাজ্যে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নটি তাদের কাছে বরাবরই উদ্বেগের বিষয় রয়ে গেছে। এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই মামরাটির দিকেও যথারীতি তাদের সতর্ক নজর থাকবে।  

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২০২৩-এর ১০ জানুয়ারি।