সার্ধশতবর্ষে কলকাতার ট্রাম, পেলো না হেরিটেজ তকমাও

জন্মদিন পালন হলো ঘটা করে। সেজেছিল ঝলমলে রঙিন সাজে। মন্ত্রী, সান্ত্রী, গণ্যমান্য মানুষেরা এসেছেন। কেক কাটা হয়েছে, হাততালির হুল্লোড়। কথা হচ্ছে ট্রামের জন্মদিন নিয়ে। কলকাতার ট্রামের সার্ধশতবর্ষ। ১৫০ বছর উপলক্ষে নানা আয়োজন। কলকাতার ট্রামের ইতিহাসকে চিত্রিত করে ৪-৫টি ডাবল বগি ট্রাম শহরের পথে নেমেছে বেশ কয়েক দশক পর। পাঁচ দিনের জন্য, এই উৎসবে ট্রামগুলোতে নানা শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেলবোর্ন থেকে অবসরপ্রাপ্ত ট্রাম কন্ডাক্টর রবার্তো ডি’ আন্দ্রেয়া, জার্মানি থেকে আসা ৩০ জন তরুণ প্রতিনিধির পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পী এবং কলকাতার ট্রাম-প্রেমীরাও সামিল হয়েছেন এই ট্রামযাত্রায়। 

কিন্তু প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ট্রামের অস্তিত্ব নিয়ে। শহরের এই অতি পুরনো সঙ্গী এখনও হেরিটেজ তকমা‌ পায়নি। একসময় শহরের ৩৭ টি রুটেই চলত ট্রাম। এখন কমতে কমতে মাত্র ২টি রুটে ট্রাম চলে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ‘দুয়োরানি’ ট্রাম উঠে যাবে নাতো?

পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ‘ট্রাম তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে সমস্যা হলো পরিবহনের জন্য মাত্র ৬ শতাংশ রাস্তা রয়েছে।‌ কিছু সমস্যার কারণে কিছু রুটে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ। আর হেরিটেজ তকমার বিষয়ে এখনই তেমন ভাবনা-চিন্তা নেই। তবে পেলেতো‌ ভালোই হয়।’ 

কলকাতার গণপরিবহন বিষয়ের গবেষক সৌভিক মুখোপাধ্যায় কিন্তু বলেছেন, ‘হেরিটেজ তকমা পেতে কোনও বাধা নেই কলকাতার ট্রামের। ইউনেস্কোর যেসব গাইডলাইন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোন পরিষেবা চালু হওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়েছে কিনা? কলকাতায় ট্রাম বন্ধ হয়নি। ইউনেস্কোর একটি জিজ্ঞাসা থাকে, এই পরিষেবা শুধু বিনোদনের জন্য নাকি সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য? সেক্ষেত্রে বলাই যায় কলকাতার ট্রাম বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিয়ে এসেছে। অন্যদিকে প্রযুক্তিগতভাবে যে গাইড লাইনে আছে সেটাও কলকাতা ট্রামের ক্ষেত্রে একই রয়েছে।’ 

অভিনেতা ও প্রযোজক অঞ্জন দত্ত বলেন, কলকাতাকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শহর বলে মনে করি। কারণ তিলোত্তমা নিজেই একটা ইতিহাসকে বহন করে। একটা শহর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে একটা স্থাপত্যর ওপরে। সেটা যেকোনও জিনিস হতে পরে। ট্রাম নতুন জিনিসের মধ্যে দিয়েও এখনও চলছে। এটা কলকাতার চারিতের মধ্যে রয়েছে।

সমস্যা হলো ট্রামকে নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেই। ভয় হয় ট্রামের পরিণতি যেন জীবনানন্দের কবিতার মতো না হয়।

‘একটি নক্ষত্র আসে’ কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছিলেন, ‘শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন/ জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ;/ চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়;...।’