ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাপ, উত্তাল যাদবপুর

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উত্তাল ছাত্রবিক্ষোভে প্রকম্পিত হয়েছে ক্যাম্পাস থেকে  রাজপথ। উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হুমকি দিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি কংগ্রেসের সমর্থন থাকলেও বিজেপি এবং তাদের ছাত্র সংগঠনের তরফে আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষকরাও। বৃহস্পতিবার ভারতের অন্তত ১০টি শহরের রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নেন ছাত্ররা। বেঙ্গালুরু, জয়পুর ও চেন্নাইয়ের বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের দ্রুত মুক্তির দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভের এই বাস্তবতায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দিল্লির এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে এ আন্দোলন এখন পুরো ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বাম ছাত্রদের সংগঠনগুলোর বিক্ষোভে বাধা দেয় ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর হামলে পড়ে বিজেপি সমর্থকরা। 

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে এমন প্রতিক্রিয়া দেখায় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার কানহাইয়া কুমারের সমর্থনে বড় রকমের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেইউ)। এসএফআই, ডিএসও-সহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ডাকে এ বিক্ষোভে শামিল হন শিক্ষার্থীরা। এর বিপরীতে উত্তাল ছাত্রবিক্ষোভে কথিত ‘দেশবিরোধী স্লোগানের’ প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ করে বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। তারা জেএনইউ ইস্যুতে বামদের লাগানো পোস্টার, ব্যানার ভাঙচুর করে।

জেএনইউ ইস্যুতে বামদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় কংগ্রেস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বামদের সঙ্গে মিলে বিজেপিকে প্রতিরোধ করে কংগ্রেস সমর্থকরা। এই ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। রাজ্যের গভর্নর কেশরীনাথ ত্রিপাঠিও এ ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছেন।

জেইউ’তে কথিত দেশবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ উঠলেও যাদবপুরের ভিসি সুরঞ্জন দাস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না এবং পুলিশ ডেকে তিনি ক্যাম্পাস শাসন করবেন না। সে রকম কিছু হলে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

Release Kanhaiya Kumar

ভিসি সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘দরজা বন্ধ করে, ফোর্স দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যায় না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হলো মুক্ত চিন্তার জায়গা।’ বিচ্ছিন্নতাবাদী বা দেশবিরোধী স্লোগানের নিন্দা করলেও গণতন্ত্রে সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সুরঞ্জন দাস।

জেএনইউতে আফজাল গুরুর পক্ষে স্লোগান উঠার একদিন পর বুধবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কাশ্মির, মনিপুর ও নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে পোস্টার পাওয়া গেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে এ কথা জানানো হয়। হিন্দিতে লেখা এক পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘আমরা স্বাধীনতা চাই। কাশ্মিরের স্বাধীনতা, মনিপুরের স্বাধীনতা, নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতা।’ তবে ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলো এসব পোস্টার তাদের নয় বলে দাবি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি’র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদারের দাবি, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যাদবপুরের নির্ঝর, প্রিয়স্মিতা এবং অরুমিতা রাষ্ট্রদ্রোহী এবং পাকিস্তানের দালাল। এরা লাহোরে গিয়ে ভারতের বিরোধিতা করতে পারে। আমরা অবিলম্বে এদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’ সুবীর হালদারের দাবি, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঋতব্রত (সিপিআই-এম-এর এমপি) এই দেশদ্রোহীদের সুরে সুর মিলিয়ে মিছিল করেছে। আমরা ওর উপরে নজর রাখছি। যদি এর পরেও তাকে এ ধরনের মিছিলে দেখা যায় তাহলে এফআইআর করে গ্রেফতারের দাবি তুলব।’

রাজ্য বিজেপি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহার দাবি, দেশের শত্রুদের সাহায্য করার জন্যই কমিউনিস্টদের জন্ম। তিনি বলেন, ‘চরবৃত্তি করাই ওদের কাজ। রাষ্ট্র ভাগের যে কোনও ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে বিজেপি তৈরি আছে। রাস্তায় নেমেই সাধারণ মানুষ ধোলাই দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধিতার জবাব দেবে।’

বুধবার দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে জেএনইউ ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারকে কিছু আইনজীবী মারধর করায় তাকে সমর্থন করে একে ‘পুণ্যের কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা।

Rally in Jadavpur University

এদিকে, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হবেন না। উচ্চ পর্যায়ের ওই প্যানেলে মাত্র তিনজনের পরিবর্তে আরও ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জেএনইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর নিরাপত্তার কারণে ছাত্রদের মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্ররা।

/এমপি/বিএ/