কলকাতায় ঈদের বাজারে ফলের চেয়ে সবজির দাম বেশি!

কলকাতায় জমে উঠেছে ঈদের বাজার। তবে এই বাজারে ফলের চেয়ে শাক-সবজির দাম বেশি। ফল দিয়ে ইফতার করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তাই ফলের বেশ চাহিদা। এই চাহিদার কারণে শসা, আপেল, কলাসহ সব ফলের দাম বেড়েছে।

একসপ্তাহ আগে প্রতি কেজি শসার দাম ছিল ৪০ রুপি। এখন একধাক্কায় দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপি। আপেল ১৩০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০০ রুপি। মাঝারি সাইজের চারটি কমলালেবুর দাম এখন ৫০ রুপি। তরমুজ ৩৫ রুপি কেজি হয়েছে। আনারস ৭০ রুপি। পাকা পেঁপে ৭০ রুপি কেজি। শাক ও আলুর দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ রুপি।

লেক মার্কেটের এক ফল বিক্রেতা বলেন, এখন খেজুরের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বাজারে এখন ২০০ রুপি থেকে ১৬০০ রুপি কেজি দরে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। বেদানা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ রুপি কেজি দরে। এদিকে, ঘিয়ে ভাজা সেমাই প্রতি কেজি ১০০ থেকে ৩০০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে। কাগজি লেবু একটার দাম ৫ রুপি।

শুধু কি ফল? কলকাতায় শাক-সবজির দামেও আগুন। জ্যোতি আলু ২২ রুপি কেজি, চন্দ্রমুখী ২৬ রুপি কেজি, পেঁয়াজ ৩০ রুপি কেজি, টমেটো ৩০ টাকা রুপি, ঢ্যাঁড়স, উচ্ছে, বেগুন ৪০ রুপি কেজি, কুমড়ো ৩০ রুপি কেজি।

সবজির দর বাড়ার জন্য অত্যধিক গরমকে দায়ী করেছেন বিক্রেতারো। পাঁঠার মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৪০ থেকে ৯০০ রুপি কেজি, ব্রয়লার মুরগি ২৫৯ থেকে ২৬০ রুপি কেজি। দেশি মুরগি ৫০০ রুপি। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতিটা সাড়ে পাঁচ রুপি। দেশি মুরগির ডিম প্রতিটি ৮ রুপি, হাঁসের ডিম প্রতিটি ১২ রুপি।

শনিবার মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে জামা-কাপড়, সেমাই-লাচ্ছা, টুপি-আতর প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। প্রবল গরমের মধ্যেই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা-নিউমার্কেট চত্বরে ভিড় দেখা গেছে। বেলগাছিয়া, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, রিপন স্ট্রিট, হাজি মুহম্মদ মহসীন স্কোয়ার, আনোয়ার শা রোড, গড়িয়া থেকে শুরু করে খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ সব জায়গায় ভিড় ছিল।

বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের ফল, বিরিয়ানির চাল, মসলা। রঙবেরঙের টুপি, জায়নামাজ আর আতর কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। টুপির দাম ২০ রুপি থেকে পাঁচশো রুপির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। টুপি কিনতে নাখোদা মসজিদের সামনে লম্বা লাইন দেখতে পাওয়া গেছে।

আনারস, স্ট্রবেরি মেলন, আইস ব্লু, চকলেট মাক্স নামের বিভিন্ন সুবাসের আতর বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম ৫০ থেকে ৫০০ রুপি। এক ভরি চন্দন আতরের দাম প্রায় ৫ হাজার রুপি।

বিক্রেতা ওমর আলি জানিয়েছেন, তবে এবার আতরের বাজারে সবচেয়ে চাহিদা 'জান্নতুল ফিরদৌস' আর মজমা আতরের। ধর্মতলায় সুন্দর কাজ করা জায়নামাজ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ৫ হাজার রুপি।

পিছিয়ে নেই নারীরাও। সালোয়ার কামিজ, চুড়িদার, শাড়ি আর বোরকা কিনতে কলকাতার শপিং মলগুলোতে আসছেন অনেকেই। মেহেদি আর বাহারি কাঁচের চুড়ি কিনতে ভিড় করছেন সবাই।

পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মতলায় বাজার করার সময় ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা মনজুর খান বলেন, আমাদের মতো ঢাকার অনেকেই ঈদের বাজার করতে কলকাতায় আসেন। ঈদ ঢাকায় করব। কেনাকাটা এখনই সেরে নিচ্ছি। কলকাতার সব জিনিসই ঢাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু দাম অনেক বেশী। তাই এখানে আসা। বেড়ানো হলো, আবার ঈদের শপিং করে নেওয়াও হলো।

এদিকে, জিনিস পত্রের দাম বেশি হওয়ায় ইফতার ও সাহরিতে হিমশিম খাচ্ছেন কলকাতার রোজাদার। ইফতারের জন্য পেঁয়াজু আর বেগুনির মূল উপাদান বেসনেরও দর বেড়েছে৷ মটর ডালের বেসন কেজি প্রতি ৪০ রুপি, ছোলার বেসন ৬০ রুপি৷ সরষের তেল ১০৯ রুপি প্রতি কেজি। চিনি প্রতি কেজি ৪২ রুপি। ইফতারের মুখরোচক হালিম চাঁদনি চক হোক বা মল্লিক বাজারের ৭৫ থেকে ১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।

মুসুর ডাল ১২০ রুপি আর ছোলার ডাল ৮০ রুপি কেজি৷ কলকাতায় মাছের দাম ইলিশ (বড়) ১৫০০ রুপি, ইলিশ (মাঝারি) ৮০০ রুপি, ট্যাংরা ৬৫০ রুপি, বাগদা চিংড়ি ৮০০ রুপি, গলদা চিংড়ি ১২০০ রুপি, মৌরলা ২০০ রুপি, পাবদা ৪৫০ রুপি, গুড় জালি ৪০০ রুপি ও ভেটকি ৬০০ রুপিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।