তিব্বতী বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা ১৪তম দালাই লামা তেনজিন গিয়াতসো আরও চার দশক বাঁচবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। শনিবার (৬ জুলাই) ৯০তম জন্মদিনে এ আশার কথা জানান তিনি। ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ছোট শহরের ধর্মশালায় দালাই লামা বসবাস করেন। সেখানেই তার জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার অনুসারী, সেলিব্রিটি ও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী এই উদযাপন তিব্বতী বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দালাই লামা পূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি তার উত্তরসূরি বিষয়ে এই জন্মদিনে কথা বলবেন।
তবে শনিবার প্রার্থনার ফাঁকে দালাই লামা ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ও তিব্বতের সব প্রাণীর বেশ ভালোভাবে সেবা করতে পেরেছি। এরপরও ১৩০ বছরের বেশি বাঁচতে চাই।’ এ কথা শুনে ভক্ত–অনুরাগীরা করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ধর্মশালায় একটি বৌদ্ধমন্দিরে সেই বিশেষ আয়োজনে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো প্রার্থনা করেন তিনি।
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তিব্বতিদের ধর্মগুরুর দায়িত্বে থাকা দালাই লামা ভক্তদের উদ্দেশে তিব্বতি ভাষায় বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশ হারিয়ে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছি। কিন্তু এরপরও আমি অনেক প্রাণীর উপকার করতে পেরেছি। তাই ধর্মশালায় বসবাস করে এখান থেকেই আমি যত দূর সম্ভব প্রাণিকূল ও ধর্মের সেবা করে যেতে চাই।’
তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক জন্মদিন বার্তায় দালাই লামা বলেন, তিনি ‘শুধু একজন সাধারণ বৌদ্ধ ভিক্ষু’ এবং তিনি মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রচারে তার অঙ্গীকারে অবিচল থাকবেন।
নোবেল বিজয়ী এই ধর্মগুরু বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তার অনুসারীরা বৌদ্ধধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে রয়েছে। তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নন। তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। তবে বেইজিং তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে অভিহিত করে এবং তিব্বতের ধর্মকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে আসছে।
গত বুধবার তিনি জানান, মৃত্যুর পর তিনি পুনর্জন্ম নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের নেতৃত্বে ফিরবেন। তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গাদেন ফোড্রাং ট্রাস্ট তার উত্তরসূরি নির্ধারণে একমাত্র কর্তৃত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হবে।
চীন অবশ্য বলেছে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্ধারণ চীনা নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষে হবে।
তবে চীনের উত্থানের প্রতিরোধে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংকে দালাই লামা এবং অন্যান্য তিব্বতী বৌদ্ধ লামাদের উত্তরাধিকার নিয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
১৯৫৯ সালে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ এক বিদ্রোহের পর তিনি নিজ দেশ তিব্বত ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তার সঙ্গে আরও লক্ষাধিক তিব্বতী ভারত চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি তিব্বতিদের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে শান্তিপূর্ণ ‘মধ্যপন্থা’ গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন।
জন্মদিনের উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং দীর্ঘদিনের অনুসারী ও হলিউড তারকা রিচার্ড গিয়ার ও ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বক্তব্য রাখবেন। দালাই লামাও এক ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ বিশ্বনেতারা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।