রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবও টলাতে পারেনি পেলেকে

ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাও পাওলোর এক বস্তিতে জন্ম পেলের। যার জন্ম ফুটবলের জন্য। রাস্তায় মোজা মুড়িয়ে অথবা জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলে শৈশবের অনেক সময় কেটেছে। জাতীয় দলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে ফুটবলের রাজা।   

ব্রাজিলের জন্য তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা অনেকের হয়তো অজানা। একটা দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ভূমিকা রাখেন এই কিংবদন্তি। তার সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ব্রাজিলের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলবা বলেন, 'পেলেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এটি কোনও নিছক খেলা নয়, একটা গ্রেট শো ছিল। তার মতো ১০ নম্বরে আর কেউ কখনও ছিলেন না।'

শুধু অর্জন নয়, দেশপ্রেম দিয়েও কোটি কোটি ব্রাজিলিয়ানের মনে দাগ কেটেছেন। ফুটবলার এই রাজা কখনও ইউরোপের ক্লাবের হয়ে খেলেননি। ৫৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর পেলের নাম ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়াজুড়ে। নামিদামি ক্লাব থেকে ডাক আসে। কিন্তু পেলে আকড়ে ছিলেন নিজ দেশের ঘরোয়া ক্লাব সান্তোসে।

১৯৬১ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট  জ্যানিও কোয়াড্রোস তাকে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা করেন। যার অর্থ বছরের পর বছর ধরে তিনি বিদেশে ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য যেতে পারবে না। ফলে কখনও ইউরোপের ক্লাবে খেলা হয়নি তার। যদিও সুযোগ হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানইউ'র মতো বড় ক্লাবে যাওয়ার সুযোগ।

কাতার বিশ্বকাপের সময় পেলে অসুস্থ হয়ে পড়লেও হয়তো সেখানে চূড়ান্ত শোকের ছায়া নামেনি। বিধাতা হয়তো বিশ্বকাপের রঙয়ে শোকের ছায়া নামতে দেননি। ডাক্তাররা তো তখন আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কোনও কিছুই যে তার শরীরে কাজ করছিল না। শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী পেলে।

প্রতিটি ব্রাজিলিয়ানের কাছে পেলে মানেই অন্যকিছু। এ প্রজন্মের মানুষ তার খেলা উপভোগের খুবই কমই সুযোগ পেয়েছে। মাঠের অসাধারণ নৈপুণ্যে পুরনো প্রজন্ম তাকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে মনে রেখেছেন। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জাতীয় দলের খেলা চলাকালীন হাসপাতালের বিছানা থেকেই বিজয় উদাযাপন করেছিলেন পেলে। দলটির হাতেই সোনালি ট্রফিটা যেন ওঠে প্রার্থনাও করেছিলেন খুব করে। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হলো, তিনিও চলে গেলেন অন্য জগতে। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। 

ব্রাজিল এমন একটি দেশ, যেই দেশের জনগণ ফুটবল দিয়ে নিজেদের সংজ্ঞায়িত করে। বিশ্বকাপে জাতীয় দলের খেলার সময় ছুটি দেওয়া হয়। 

যারা কখনও ফুটবলের দলকে সমর্থন করেননি তারাও পেলেকে ফুটবল রাজা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এমন দেশে তিনি জন্মেছেন যেখানে বর্ণবাদের মতো সমস্যা প্রকট। যদিও বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তাকে খুবই কমই আওয়াজ তুলতে দেখা গেছে। এর জন্য সমালোচিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়। 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার দুনিয়ার মায়া ছেড়ে গেলেও গেলেও ব্রাজিলে তার স্মৃতি চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। সূত্র: বিবিসি