যেভাবে সৌদি আরবের জন্য বুমেরাং হলো হারিরির পদত্যাগ

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের অনেক জায়গায় একটি পোস্টার টানানো হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ‘আমরা তোমার সঙ্গে আছি।’ লেবাননের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন, হারিরি সৌদি আরবে বন্দিদশায় ছিলেন। অনেক বিষয়ে মতভেদ থাকলেও এ বিষয়ে তারা অনেকটাই একমত। 

হারিরিকে লেবাননে ফেরত পেতে রাস্তায় নামে মানুষ

গত রবিবার (১২ নভেম্বর) রাতে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করার সময় হারিরিকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি লেবাননের নাগরিকদের ইতিবাচক আশ্বাস দিতে চাই, যাতে তারা বুঝতে পারে আমরা কত ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে আছি।’

সৌদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া চ্যানেলের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা লেবাননের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। কারণ এর আগে কখনই এমন ঘটনা ঘটেনি। পদত্যাগের সময় ইরান ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র হিজবুল্লাহকে দেশের অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করেন হারিরি। এ সময় তিনি দাবি করেন, লেবাননে তার জীবন হুমকিতে রয়েছে। কিন্তু লেবাননের প্রেসিডেন্টসহ দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, হারিরির পদত্যাগের পেছনে সৌদি আরবের হাত রয়েছে।

তবে সৌদি আরব বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। সৌদি আরব যদি ভেবে থাকে হারিরির পদত্যাগে হিজবুল্লাহ ও তার মিত্র ইরানের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হবে, তাহলে তাদের হতাশ হতে হবে। কারণ এখনও এ ধরনের কোনও জনরোষ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং হারিরির পদত্যাগের ঘোষণা দেশকে নতুন কোনও ঝামেলায় ফেলে দেয় কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।

এদিকে হারিরির পদত্যাগের পরের দিন হিজবুল্লাহর নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেলে দলের সেক্রেটারি হাসান নাসারুল্লাহ বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, হারিরি কোনও এখন আর মুক্ত মানুষ নন। সৌদি আরব তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। নাসারুল্লাহ হারিরিকে আক্রমণ করার পরিবর্তে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

শুধু নাসারুল্লাহই নন, দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইকেল আওন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হারিরি সৌদি আরবে বন্দি আছেন। এটা আমাদের স্বাধীনতার উপর এক ধরনের আক্রমণ।’

ফ্রান্সে হারিরি

লেবানিজদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকট হলেও হারিরি নিজেই সবকিছু করছেন বলে বিশ্বাস করেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এমনকি সৌদি আরবের রাজনৈতিক মিত্ররাও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তারা হারিরির ফিরে আসাকে তাদের ‘জাতির জন্য সম্মান’ বলে মনে করছেন।

এ বিষয়ে সৌদিপন্থী রাজনৈতিক নুহাদ আল ম্যাকনুক বলেন, ‘আমরা কোনও ভেড়ার পাল বা কারও সম্পত্তি নই যে, একজন আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করবে।’ বৈরুতের সাধারণ নাগরিকরাও একই মনোভাব ব্যক্ত করছেন।

টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও হারিরি এখন ফ্রান্স সফরে আছেন। তবে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আওন এক টুইট বার্তায় জানান, তিনি হারিরির সঙ্গে কথা বলেছেন। হারিরি দেশে ফিরে আগামী বুধবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ফ্রান্সে পৌঁছানোর পর হারিরি লেবাননের বিভিন্ন নেতার সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে হারিরি সেখানে পৌঁছানোর লেবানন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বিশ্বাস করেন, হারিরি বৈরুতে ফিরে আসবেনই। 

লেবানন যুগ যুগ ধরে বিদেশি হস্তক্ষেপের শিকার। এ কারণে দেশটির রাজনৈতিক রম্য কবি আবদাল রহিম আল-আউজি বলেন, ‘ফারাও-রোমানদের সময় থেকে এটা চলে আসছে। শুধু সৌদি নয়, ইরান, আমেরিকা সবাই আমাদের উপর হস্তক্ষেপ করে।’

তবে এখন বেশিরভাগ মানুষ টের পাচ্ছে এই হস্তক্ষেপ এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এখন বাইরের লোকজন লেবাননের রাজনৈতিকদের শক্তি, ঘুষ অথবা ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। যদি হারিরির পদত্যাগের পেছনে সত্যিই সৌদি আরব জড়িত থাকে তবে তাদের বিষয়টি আরও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ দেশটি নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে,‘সহজে গেলা যায় কিন্ত হজম করা যায় না।’

সিএনএন অবলম্বনে।