সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের উপাদান সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত বেলজিয়ামের ৩ প্রতিষ্ঠান

রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান সিরিয়াতে সরবরাহকারী বেলজিয়ামের ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রাসায়নিক উপদান প্রস্তুতকারী ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ১৬৮ টন আইসোপ্রোপানল সরবরাহ করেছে সিরিয়ায়। আইসোপ্রোপানল দিয়ে সারিন গ্যাস বানানো হয়। রাসায়নিক হামলায় সারিন গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেলিংক্যাট ও অলাভজনক জার্মান সংস্থা  সিরিয়ান আর্কাইভের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০১৩ সালের পর থেকে বেলজিয়ামই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত একমাত্র দেশ যা সিরিয়াতে আইসোপ্রোপানল সরবরাহ করেছে। অথচ ওই সময়ে রাসায়নিক অস্ত্রবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ওপিসিডব্লিউয়ের জারি করা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছিল।রাসায়নিক অস্ত্র নির্দেশে ব্যবহৃত চিহ্ন

আইসোপ্রোপানল নামের রাসায়নিকটি ‘রাবিং অ্যালকোহল’ নামেও পরিচিত। এটি জীবাণুনাশক, রঙ, বার্নিশসহ দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত জিনিস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে এর ভয়ঙ্কর অপব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে।  উপদানটি ব্যবহার করে সারিন গ্যাস তৈরি করা যায়। বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকায়  রাসায়নিক হামলা চালাতে সারিন গ্যাস ব্যবহার করার অভিযোগে অভিযুক্ত রুশসমর্থিত সিরিয়ার আসাদ বাহিনী।

২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠান সিরিয়াতে রাসায়নিক উপাদানের ২৪টি চালান পাঠিয়েছিল। আদালতের জারি করা সমন থেকে জানা গেছে, এক সাথে কাজ করা ওই তিনটি প্রতিষ্ঠান সিরিয়াতে ১৬৮ টন আইসোপ্রোপানল, ২১৯ টন অ্যাসিটোন, ৭৭ টন মিথানল এবং ২১ টন ডাইক্লোরোমিথেন সরবরাহ করেছে। আইসোপ্রোপানল ও মিথাইলফসফোনাইল ডাই ফ্লুরাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত সারিন গ্যাস উৎপাদন করা হয়। ‘কেমিক্যাল উয়েপন কনভেনশন’ অনুযায়ী ১৯৯৩ সাল থেকে সারিন গ্যাস  নিষিদ্ধ।

অভিযুক্ত তিন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে পর্যন্ত সময়কালে দৃশ্যত বেলজিয়ামের শুল্ক কর্তৃপক্ষের  অনুমতি নিয়েই সিরিয়াতে ওই উপদান সরবরাহ করেছে তারা। পরে আন্তর্জাতিক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা অভিযোগ এড়াতে তাদের ওপর অনুমোদন সংগ্রহে ব্যর্থতার দায় চাপিয়েছে বেলজিয়াম। প্রতিষ্ঠাগুলোর পক্ষ থেকে থেকে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ২০ বছর ধরে তারা ব্যবসা করেছে। তাদের কোনও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম কোনও নিষিদ্ধ তালিকায় উঠতে দেখেনি তার। সিরিয়া, লেবানন ও জর্ডানের রং ও চামড়া শিল্পের জন্য তারা রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করে। সিরিয়ায় রাসায়নিক সরবরাহের জন্য যে আলাদা অনুমতি নিতে হবে তা তারা জানতো না; বেলজিয়ামের শুল্ক কর্তৃপক্ষও কোনও বাধা দেয়নি।

এএই কেমি ট্রেডিং, অ্যানেক্স কাস্টমস এবং ড্যানমার লজিস্টিকস নামের ওই তিনটি প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং একজন ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ মে থেকে বিচারকার্য শুরু হবে। গার্ডিয়ান লিখেছে, ‘অনুমোদনহীন’ ওই সরবরাহের ঘটনায় অভিযুক্তদের সর্বনিম্ন চার মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে।  বেলজিয়াম নিজে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও দেশটির একজন কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা বলেছেন, অনুমোদনহীনভাবে  সরবরাহ করা ওইসব উপাদান রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। তার ভাষ্য, বিষয়টি শুল্ক বিভাগ সংক্রান্ত।