শনিবারের হামলা হামাসের জন্য অনেক বড় শিক্ষা: ইসরায়েল

গাজার নিয়ন্ত্রণের থাকা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গত শনিবার বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে হামাসের ৪০টি স্থাপনাকে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ২০১৪ সালের পর থেকে হওয়া হামলাগুলোর মধ্যে শনিবার চালানো হামলাই হামাসের জন্য অনেক বড় শিক্ষা ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ, ইসরায়েল এখন উত্তর সীমান্তে থাকা সিরিয়ায় ইরানি প্রভাবের বিষয়েই মনোযোগ ধরে রাখতে চায়। গাজাতে হামলার ইচ্ছে তাদের ছিল না। কিন্তু হামাসের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। গাজা থেকে উৎক্ষেপিত হামাসের রকেট আঘাত হানছিল ওই এলাকায়। তাছাড়া নিয়মিত দাহ্য ঘুড়ি ও বেলুন ব্যবহার করে ইসরায়েলের ওই অঞ্চলের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল হামাস। এর প্রেক্ষিতে শনিবার হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রয়োজনে আরও তীব্র হামলার ঘোষণা দিয়েছেন।3500

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজা শহরের পুলিশ স্টেশনের পাশে আধা-নির্মিত একটি ভবনের ওপরে চারটি বোমা নিক্ষেপ করে। এত পুরানো ওই স্থাপনাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। চারতলা ভবনটির পাশেই ছিল একটি পার্ক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলার সময় গাজার ২ কিশোর নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও ১০ জন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, শনিবারে হামলায় ইসরায়েল হামাসের ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সুড়ঙ্গ, হামাস হেডকোয়ার্টার ও অন্যান্য স্থাপনা। তিনি মন্তব্য করেছেন, হামাসের রকেট হামলা, সীমান্তে সহিংসতা এবং দাহ্য ঘুড়ি ও বেলুন ব্যবহার করে ইসরায়েলি ফসলের ক্ষেত নষ্ট করার জবাবে ইসরায়েল ওই হামলা চালিয়েছে। তার ভাষ্য, ‘হামাসকে আমরা এই বার্তা দিতে চাই, হামলা আরও তীব্র করার সক্ষমতা আমাদের আছে এবং প্রয়োজনে আমরা তা করব। হামাস যা করছে তার পরিণতিতে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।’

গার্ডিয়ান লিখেছে, গাজা শহরে হামলার ঘটনা মূলত ঘটে বড় আকারের সংঘাতের সময়। গত তিন দশেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এমন সংঘাত হয়েছে তিনটি। হামলা ও পাল্টা হামলার পর মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। অস্ত্রবিরতি ঘোষণার আগ পর্যন্ত হামাস প্রায় ২০০ রকেট হামলা চালিয়েছে। হামাসের রকেট একটি ইসরায়েলি আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরিত হলে চারজন আহত হয়েছেন। অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পরই নেতানিয়াহু মন্তব্য করেন, এবারের ইসরায়েলি ২০১৪ সালের পর হামাসের জন্য হওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল। ইসরায়েল প্রয়োজনে হামলার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করবে।

হামাস তাদের এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ইসরায়েল যাতে হামলা না চালায় সে জন্যই সতর্কবাণী হিসেবে তারা রকেট হামলা চালিয়েছে। হামাসের মুখপাত্র ফাওজি বার হৌম বলেছেন, এই হামলা ‘বার্তা’ পৌঁছে দেওয়ার জন্য দরকার ছিল।

অস্ত্রবিরতি কার্যকর করার পর গাজা সীমান্তে নাগরিকদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে একটি সমুদ্র সৈকত। তবে রকেট হামলা হলে সতর্কতা সংকেত হিসেবে যে সাইরেন বাজানো হয় তা রবিবার সকালেও বাজতে শোনা গেছে। অস্ত্রবিরতি আদৌ কার্যকর থাকছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান।